শনিবার, ২৭ জুলাই ২০২৪, ০৯:৫৮ পূর্বাহ্ন

শিমুলিয়ায় মানুষের ঢল: স্বাস্থ্যবিধির বালাই নেই

কেএমআর
আপডেট : জুলাই ১৪, ২০২১

# লকডাউনের ১৪ দিনে গ্রেপ্তার ৯ হাজার  # লকডাউন তুলে নেয়ায় সংক্রমণ ঝুঁকি বাড়ার শঙ্কা স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের

 

দেশে মহামারি করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ পরিস্থিতি ঊর্ধ্বমুখী। প্রতিদিন সংক্রমণ ও মৃত্যুর হার উদ্বেগজনকভাবে বাড়ছে। এ অবস্থায় চলমান বিধিনিষেধ শিথিল করায় সংক্রমণ ভায়াবহ রূপ নিতে পারে বলে শঙ্কা প্রকাশ করেছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। এদিকে লকডাউন শিথিলের খবর শুনেই শিমুলিয়ায় মানুষের ঢল দেখা গেছে। ছিল না স্বাস্থ্যবিধিরি বালাই।

টানা ১৪ দিনের কঠোর লকডাউনের শেষ দিনে মুন্সীগঞ্জের শিমুলিয়া ফেরি ঘাটে ঢল নামে মানুষের। গতকাল শিমুলিয়া ঘাটে ঢাকা ও দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চল উভয়মুখী যাত্রীর আসা-যাওয়ায় মুখোর ছিল ঘাট এলাকা। কোরবানির ঈদকে সামনে রেখে কোভিডে মৃত্যু ও সংক্রমণ ঝুঁকির মধ্যে এ ভিড়ভাট্টা দেখা যায়। শিমুলিয়া ঘাটের ট্রাফিক পরিদর্শক জাকির হোসেন বলেন, লকডাউন শিথিল হওয়ার কথা শুনে বুধবার থেকেই ঘাটে চাপ দেখা যাচ্ছে। পার্কিং ইয়ার্ডে দুই শতাধিক পণ্যবাহী গাড়ি ফেরি পারাপারের অপেক্ষায় রয়েছে বলেও জানান তিনি। মাওয়া নৌ পুলিশ স্টেশনের ইনচার্জ সিরাজুল কবির জানান, ঈদ যত ঘনিয়ে আসছে ভিড় ততই বাড়ছে শিমুলিয়া ঘাটে। কঠোর বিধিনিষেধের মধ্যে চেকপোস্ট থাকার পরও কোনোভাবেই আটকে রাখা যাচ্ছে না জনস্রোত।

আজ থেকে এ রুটে লঞ্চ এবং ট্রলার চলাচল শুরু হচ্ছে। ফলে গতকাল শিমুলিয়া ঘাটের স্পিডবোট, লঞ্চ এবং ট্রলার মালিক-শ্রমিকদের মধ্যেও চাঞ্চল্য দেখা গেছে। যাত্রীরাও জানিয়েছেন, চেকপোস্টগুলোয় আগের মতো কড়াকড়ি নেই। কোনো জিজ্ঞাসাবাদ ও বাধা ছাড়াই ঘাটে আসছে যাত্রীরা। লকডাউন ওঠার আগেই কেন বাড়ি ফিরছেন জানতে চাইলে ফরিদপুরের ভাঙাগামী যাত্রী আলমগীর হোসেন জানান, বৃহস্পতিবার থেকে লকডাউন না থাকায় অনেক ভিড় হবে। তাই একদিন আগেই গ্রামে ফিরছি।
বিআইডব্লিউটিসির সহ মহাব্যবস্থাপক (মেরিন) আহম্মেদ আলী জানান, শিমুলিয়া-বাংলাবাজার নৌ রুটে পদ্মার প্রবল স্রোত মোকাবেলা করে বহরের ১৭ ফেরির মধ্যে ১৩টি চলাচল করবে।
বিআইডব্লিউটিসির ঘোষণা অনুযায়ী পণ্যবাহী ট্রাক-অ্যাম্বুলেন্স জরুরি পরিষেবার যান ছাড়াও মাইক্রোবাস, প্রাইভেটকার ও মোটর সাইকেল পারাপার হতে এদিন দেখা গেছে। আর নানা বিড়ম্বনা মাড়িয়ে ছোট ছোট যানবাহনে অতিরিক্ত ভাড়া মিটিয়ে ভেঙে ভেঙে মানুষ আসছে ঘাটে। চব্বিশ দিন বন্ধ ধাকার পর আজ থেকে লঞ্চ চলাচল শুরু হচ্ছে।

এদিকে গতকাল বুধবার স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মুখপাত্র অধ্যাপক ডা. মো. রোবেদ আমিন নিয়মিত বুলেটিনে বলেন, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ও স্বাস্থ্য অধিদপ্তর মনে করে, এই বিধি-নিষেধ শিথিল করা সাপেক্ষে আমাদের সংক্রমণ বৃদ্ধি হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা আছে। তিনি বলেন, দেশে টানা গত কয়েকদি ১২ হাজারের বেশি রোগী শনাক্ত হয়েছে এবং প্রতিদিন দুই শতাধিক মানুষ মারা যাচ্ছেন। করোনা মহামারীর বছর গড়ানোর পর এখনই বাংলাদেশে সবচেয়ে বিপর্যস্ত অবস্থা মোকাবেলা করছে। ভারতে উদ্ভূত করোনা ভাইরাসের ডেল্টা ধরণে স্থানীয় সংক্রমণ ঘটার পর গত মার্চের শেষ ভাগ থেকে দেশে আক্রান্ত ও মৃত্যুর সংখ্যা বাড়তে থাকে।

ডা. রোবেদ আমিনই বলেন, সংক্রমণ এখনও বেড়েই চলেছে। অনেক মানুষ মারা যাচ্ছে, হাসপাতালের সমস্ত খালি বেড পূর্ণ হয়ে যাচ্ছে। এ অবস্থায় লকডাউন শিথিল করা অনেকটা আত্মঘাতি। তিনি বলেন, যত বেশি মানুষের মেলামেশা হবে এবং স্বাস্থ্যবিধি মানা হবে না, সংক্রমণ তত বেশি বেড়ে যাবে। সেজন্য ঝুঁকিটা তো থেকেই যাচ্ছে।

এদিকে করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ ঠেকাতে কঠোর লকডাউনের ১৪ দিনে বিধিনিষেধ অমান্যে রাজধানীতে নয় হাজারের বেশি মানুষকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। একই সময়ে ভ্রাম্যমাণ আদালত দুই হাজার ৯৯৯ জনের কাছ থেকে ৩৯ লাখ ১২ হাজার ৩৩০ টাকা জরিমানা আদায় করা হয়েছে।

এছাড়া ট্রাফিক পুলিশ অপ্রয়োজনে বের হওয়া আট হাজার ১৩৯টি গাড়িকে মোট এক কোটি ৮৩ লাখ ৩৯ হাজার ৭৭৫ টাকা জরিমানা করেছে।
গত ১ জুলাই থেকে শুরু হওয়া এই কঠোর লকডাউনের বিধিনিষেধ প্রথমে এক সপ্তাহ চলার কথা থাকলেও পরে তার আরও এক সপ্তাহ বাড়িয়ে ১৪ জুলাই পর্যন্ত করা হয়।

 

তবে ঈদের আগে এই বিধিনিষেধ ১৫ থেকে ২৩ জুলাই পর্যন্ত শিথিল করা হয়েছে। এরপর ২৩ জুলাই থেকে ৫ অগাস্ট পর্যন্ত আবার কঠোর লকডাউনের সরকারি ঘোষণা এসেছে।

লকডাউনের প্রথমদিন ঢাকায় ৫৫০ জন এবং দ্বিতীয় দিন ৩২০ জন গ্রেপ্তার হয়।
তবে দিন যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে মানুষের চলাচলও বেড়ে যায়। এই ১৪ দিনের মধ্যে সবচেয়ে বেশি গ্রেপ্তার হয়েছে সপ্তম দিনে ১১০২ জন আর দ্বিতীয় সর্বোচ্চ অষ্টম দিনে ১০৭৭ জন।

ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে সবচেয়ে বেশি জনকে আটক করে জরিমানা করা হয়েছে লকডাউনের তৃতীয় দিনে ৩৪৬ দিনে আর দ্বিতীয় সর্বোচ্চ অষ্টম দিনে ৩১৮ জনকে।

তবে সবচেয়ে কম সংখ্যক জনকে জরিমানা করা হয়েছে ১৪তম দিনে, ওই দিন ১০৫ জনকে জরিমানা করা হয়েছে।

ঢাকা মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত উপকমিশনার ইফতেখারুল ইসলাম বলেন, লকডাউনের শেষ দিনে রাজধানীতে অপ্রয়োজনে বের হওয়ায় ৪৬২ জনকে গ্রেপ্তার আর মোবাইল কোর্টে ১০৫ জনকে এক লাখ ৩২ হাজার ৭০০ টাকা জরিমানা করা হয়েছে। ট্রাফিক পুলিশ ৭৪৪ টি গাড়িকে ১৫ লাখ ৭৯ হাজার ৫০০টাকা জরিমানা করেছে।

 

লকডাউনের ১৪ দিনে সবচেয়ে বেশি গাড়ির বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে ষষ্ঠ দিনে; ওই দিন রাজধানীর ট্রাফিক পুলিশ ১০৮৭টি গাড়ির বিরুদ্ধে মামলা করেছে। আর লকডাউনের দ্বিতীয় দিনে সবচেয়ে কম ৬৮টি গাড়ির বিরুদ্ধে মামলা করে ট্রাফিক পুলিশ। গ্রেপ্তারদের বেশিরভাগকেই ঢাকা মহানগর পুলিশ অধ্যাদেশের কয়েকটি ধারায় আদালতে পাঠায়।
এসব মামলা ‘পাঁচ আনি‘ মামলা হিসেবে পরিচিত। আদালতে ম্যাজিস্ট্রেট কর্তৃক ধার্যকৃত জরিমানার টাকা দিয়েই ছাড়া পেয়েছেন গ্রেপ্তারদের বেশিরভাগ।

 


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

অন্যান্য সংবাদ