শনিবার, ২৭ জুলাই ২০২৪, ০৮:৩৫ পূর্বাহ্ন

বিধিনিষেধ শিথিল: মহামারি নিয়ন্ত্রণ পরিকল্পনা ব্যর্থ হতে পারে

কেএমআর
আপডেট : জুলাই ১৪, ২০২১
করোনায় ২৪ ঘন্টায় মৃত্যু ৮১, শনাক্তের হার ১৯.৯৩

# লকডাউনে হত দরিদ্র হয়েছে অনেক পরিবার # কাল থেকে শিথিল হচ্ছে বিধিনিষেধ # চলবে গণপরিবহন, লঞ্চ, ট্রেন খুলবে শপিংমল # সংক্রমণঝুঁকি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যেতে পারে।
# চলতি মাসের ১৩ দিনে শনাক্ত ১,৩৩,৮৯৭ মৃত্যু- ২৩৩৯

 

 

ঈদ মানেই আনন্দ। আর মাত্র কয়েক দিন পরেই ঈদুল আযহা। প্রতি বছর এ ঈদকে ঘিরে থাকে নানা ভাবনা। বিশেষ করে কোরবনীর পশু কেনা-বেচা এ ঈদের বিশেষ আনন্দ। দেশের বিভিন্ন প্রান্তে কর্মজীবিরা প্রিয় মানুষের ভালবাসার টানে ঘরে ফেরা, মা-বাবা, ভাই-বোন, ছেলে-মেয়ে, স্ত্রী বা নিকট আত্মীয়র জন্য মার্কেটে-মার্কেটে ঘুরে-ঘরে কেনাকাটার অনুভূতিটা ব্যক্ত করা সম্ভব না। কিন্তু দেশে মহামারি করোনা সংক্রমণের উচ্চঝুঁকির কারণে চলমান লকডাউনে অনেক স্বচ্ছল পরিবার হয়েছে অস্বচ্ছল। আর দরিদ্ররা হতদরিদ্রে পরিণত হয়েছেন। ফলে বিষাদে পরিণত হয়েছে যেন সেই ঈদ আনন্দ।

 

দেশে করোনার প্রকোপ বাড়ছেই। প্রতিদিন শনাক্ত ও মৃত্যুর রেকর্ড হচ্ছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে সরকার জোর চেষ্টা চালাচ্ছে। সারাদেশে কঠোর লকডাউন ঘোষণা করা হয়েছে। বন্ধ রয়েছে, গণপরিবহন অফিস-আদালত, স্কুল-কলেজসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান। এ পরিস্থিতির মধ্যে নতুন সংকট দেখা দিয়েছে ঈদ ভাবনায়। একদিকে সংক্রমণের উচ্চঝুঁকি, আরেক দিকে অর্থনীতির চাকা স্বচল রাখার চ্যালেঞ্জ। সরকার ঘোষিত চলমান বিধিনিষেধে নিম্ন আয়ের মানুষের জীবন-যাপনে মারত্মক নেকিবাচক প্রভাব ফেলেছে। দারিদ্রতার কষাঘাতে জীবন অতিষ্ঠি হয়ে উঠেছেন বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ। বিশেষ করে দেশের উত্তরাঞ্চলে এবার ভয়াবহ পরিস্তিতি। করোনার প্রভাবে যেমন আম ব্যবসায় ধ্বস নেমেছে। আবার বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত করেছে ফসলি জমি ও ঘরবাড়ি। সারা বছওে পরিশ্রম করে কোরাবনীর গরু বিক্রি নিয়েও এখন তাদের কাছে আরেক শঙ্কা। খুলনা বিভাগসহ দেশের আরও কয়েকটি জেলা শহরেও করোনা পরিস্তিতির ভয়ানক অবনতি হয়েছে। শনাক্তের হার প্রতিদিন ৩০ শাতাংশে। আর এ হার গড় ১৪ শতাংশেরও ওপরে। ফলে পরিস্থিতি কতটা সংকটাপন্ন বোঝায় যাচ্ছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ঈদকে ঘিরে লকডাউন শিথিল করা হলে এবং কোরবানীর পশুর হাটে স্বাস্থ্যবিধি মানা না হলে সংক্রমণঝুঁকি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যেতে পারে।

 

তথ্য অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, আসন্ন কোরবানীর ঈদকে ঘিরে দেশে কঠোর বিধিনিষেধের শর্ত শিথিল করে মন্ত্রিপরিষদ মন্ত্রী পরিষদ বিভাগ থেকে প্রজ্ঞাপন জারি করতে যাচ্ছে সরকার। এ সিদ্ধান্ত দেশে করোনা মহামারি নিয়ন্ত্রণ করার পরিকল্পনা ব্যর্থ করে দেবে বলে মনে করেন জনস্বাস্থ্যবিদরা। তারা বলছেন, গত ঈদের রেশ এখনও চলছে, এর ভেতরে সব খুলে দেয়া হলে এর পরিণতি কী হবে বলা মুশকিল।
শিথিল হতে যাওয়া লকডাউনের ভেতরে চলবে গণপরিবহন, খুলবে শপিং মল। একইসঙ্গে আগামী ১৭ জুলাই থেকে শুরু হচ্ছে কোরবানির পশুর হাট, চলবে ২১ জুলাই পর্যন্ত। এদিকে, দোকান খোলা রাখতে দোকান ব্যবসায়ী কল্যাণ সমিতি দাবি জানিয়েছে।

 

এদিকে দেশে চলতি বছরের জুন পর্যন্ত শনাক্ত ও মৃত্যু পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, জানুয়ারিতে শনাক্ত ২১২৬০ ও মৃত্যু ৫৬৮। ফেব্রুয়ারিতে শনাক্ত ১১৮৪৬ ও মৃত্যু ২৮১। মার্চে শনাক্ত ৬৪৬৭৯ ও মৃত্যু ৬৩৮। এপ্রিলে শনাক্ত ১৪৭৮৩৭ ও মৃত্যু ২৪০৪। মে-তে শনাক্ত ৪১৪০৮ ও মৃত্যু ১১৬৯। জুনে শনাক্ত ১১২৭১৮ ও মৃত্যু ১৮৮৪ জন। এর মধ্যে গত এপ্রিলে সর্বোচ্চ শনাক্ত হয়েছিল। আর ৬ মাসে মোট শনাক্ত হয়েছেন ৩৯৯৭৪৮ জন ও মারা গেছে ৬৯৪৪ জন।

 

আর চলতি মাসের ১৩ জুলাই পর্যন্ত পরিসংখ্যাণ বলছে, এর আগে, গত ১ জুলাই শনাক্ত হয়েছিলেন ৮৩০১ আর মারা যান ১৪৩ জন। ২ জুলাই শনাক্ত হয়েছিলেন ৮৪৮৩ ও মৃত্যু হয় ১৩২ জনের। ৩ জুলাই জুলাই শনাক্ত হয়েছিলেন ৬২১৪ ও মারা যান ১৩৪ জন। ৪ জুলাই শনাক্ত হয়েছিলেন ৮৬৬১ ও মারা যান ১৫৩ জন। ৫ জুলাই শনাক্ত হয়েছিলেন ৯৯৬৪ ও মারা যান ১৬৪ জন। ৬ জুলাই শনাক্ত হয়েছিলেন ১১৫২৫ ও মারা যান ১৬৩ জন। ৭ জুলাই শনাক্ত হয়েছিলেন ১১১৬২ ও মারা যান ২০১ জন। জুলাই শনাক্ত হয়েছিলেন ১১৬৫১ ও মারা যান ১৯৯ জন। ৯ জুলাই শনাক্ত হয়েছিলেন ১১৩২৪ ও মারা যান ২১২ জন। ১০ জুলাই শনাক্ত হয়েছিলেন ৮৭৭২ ও মারা যান ১৮৫ জন। ১১ জুলাই শনাক্ত হয়েছিলেন ১১৮৭৪ ও মারা যান ২৩০ জন এবং গতকাল ১২ জুলাই শনাক্ত হন ১৩৭৬৮ ও মারা যান-২২০ জন। আর গতকাল ১৩ জুলাই মঙ্গলবার শনাক্ত হন-১২১৯৮ ও মারা যান-২০৩ জন।

 

অর্থাৎ চলতি মাসের ১৩ দিনে মোট শনাক্ত হয়েছে ১,৩৩,৮৯৭ জন আর এ সময়ে মারা গেছে ২৩৩৯ জন।
সংক্রমণের এ পরিস্থিতিতে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানিয়েছে, সামনে আরও ভয়াবহ পরিস্থিতি আসছে। পাশাপাশি কোরবানির হাট ফিজিক্যাল না করে অনলাইনে করতে সুপারিশ করেছে।

 

এ প্রসঙ্গে খোদ স্বাস্থ্য মন্ত্রীও রোববার বলেছেন, স্বাস্থ্যবিধি না মেনে চলে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যেতে পারে।
এ প্রসঙ্গে সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান (আইইডিসিআর)-এর উপদেষ্টা ডা. মুশতাক হোসেন বলেন, মানুষের ভিড় থেকেই আসলে সংক্রমণ ছড়াচ্ছে। আর সংক্রমণের উৎস অরক্ষিত রেখে কাউকে স্বাস্থ্যবিধি মানানোর জন্য মাস্ক পরতে বলা ঠিক নয়।

 

কোভিড-১৯ বিষয়ক জাতীয় কারিগরি কমিটির সদস্য অধ্যাপক ডা. নজরুল ইসলাম বলেন, কঠোর লকডাউনেই কেউ ঘরে থাকেনি। নানা অজুহাতে বাইরে বের হয়েছে। আর সেখানে কঠোর লকডাউন শিথিল হলে কী হবে সে অবস্থা বোঝার জন্য কোনও রকেট সায়েন্স দরকার নেই। সেখানে কী করে এই শপিং মল খুলে দেয়া, পশুর হাট বসানোর মতো সিদ্ধান্ত আসতে পারে সেটা বোধগম্য নয়। এসব সিদ্ধান্তই মহামারি নিয়ন্ত্রণ করার পরিকল্পনাকে ব্যর্থ করে দিচ্ছে জানিয়ে অধ্যাপক নজরুল ইসলাম বলেন, এই সিদ্ধান্ত মহামারি ছড়াতে সাহায্য করবে, রোধ করতে নয়।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

অন্যান্য সংবাদ