শনিবার, ২৭ জুলাই ২০২৪, ০৯:১৫ পূর্বাহ্ন

প্রিয় জনের টানে ছুটছে মানুষ, যানজটে ঘাটে-ঘাটে ভোগান্তি

কেএমআর
আপডেট : জুলাই ১৬, ২০২১

# পাটুরিয়া-দৌলতদিয়ায় দীর্ঘ যানজট # বাংলাবাজার ঘাটে পশুবাহী ট্রাকসহ অপেক্ষায় সাধারণ মানুষ # ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে দীর্ঘ যানজট, দিনভর দুর্ভোগ # অর্ধেক আসন খালি রেখে ছেড়ে যাচ্ছে ট্রেন

টানা ১৪ দিন কঠর লকডাউনের পর সারাদেশে চলছে গণপরিবহণ। এ সুযোগে প্রিয়জনের সঙ্গে ঈদ আনন্দ ভাগাভাগি করতে গ্রামে ছুটছে মানুষ। কিন্তু তিব্র যানজটে নাকাল যাত্রীদের পাশাপাশি পশুরাও। বিশেষ করে ফেরিঘাটগুলোতে মাইলের পর মাইল দীর্ঘ লাইনে অপেক্ষা করতে হয়েছে যাত্রীবাহী বাস ও পশুবাহী ট্রাকগুলোকে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, কোরবানির পশুবাহী ট্রাকের কারণে সড়কে বেড়েছে যানবাহনের চাপ। তার ওপর পদ্মায় তীব্র স্রোতে বিঘ্নিত হচ্ছে ফেরি চলাচল। ফলে পাটুরিয়া- দৌলতদিয়া নৌরুটের দৌলতদিয়া প্রান্তে সৃষ্টি হয়েছে যানবাহনের দীর্ঘ সারি। এ যেন অনেকদিন পর স্বরূপে ফিরেছে দৌলতদিয়া ফেরি ঘাট। বিধিনিষেধের সময় ঘাটের সংযোগ সড়কে নদী পারের অপেক্ষায় যানবাহন খুব একটা ছিল না। এখন দুই দিনেই গাড়ির চাপ বেড়ে গেছে কয়েক গুণ। প্রতিটি গাড়িকে ফেরিতে ওঠার জন্য অপেক্ষা করতে হচ্ছে দীর্ঘ সময়।

গতকাল সকাল ১০টায় ঢাকা-খুলনা মহাসড়কের দৌলতদিয়া জিরো পয়েন্ট থেকে ইউনিয়ন বোর্ড পর্যন্ত ৩ কিমি রাস্তায় অন্তত ৫ শতাধিক পশুবাহী ও যাত্রীবাহী গাড়ি দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা গেছে। এতে ভোগান্তিতে পড়েছেন চালক ও যাত্রীরা। দৌলতদিয়া ঘাট এলাকায় যানজট এড়াতে রাজবাড়ী-কুষ্টিয়া আঞ্চলিক মহাসড়কের গোয়ালন্দ মোড় থেকে কল্যাণপুর পর্যন্ত ৩ কিমি এলাকায় দুই শতাধিক অপচনশীল পণ্যবাহী ট্রাক আটকে রাখা হয়েছে। যেগুলো রাতে সিরিয়াল অনুযায়ী পার করা হবে।

দীর্ঘ এই যানজটে বাস ও ব্যক্তিগত গাড়ির যাত্রীদের পাশাপাশি দুর্ভোগে পড়েছে ট্রাকে থাকা হাজার হাজার গরু। এ অবস্থায় বিপাকে পড়েছেন গরু ব্যবসায়ীরা। তীব্র গরমে অনেক গরু অসুস্থ হয়ে পড়ছে। কিছু গরু মারা যাওয়ার খবরও পাওয়া গেছে। গরম থেকে বাঁচাতে গরুগুলোকে হাত পাখা দিয়ে বাতাস করতে দেখা গেছে ট্রাকে থাকা সহকারীদের।

বরিশাল থেকে ছেড়ে আসা গোল্ডেন লাইন পরিবহনের চালক আলিম সরদার জানান, ভোরে দৌলতদিয়া ঘাটে এসে পৌঁছাই। কিন্তু এখন পর্যন্ত ফেরির নাগাল পাইনি। সিরিয়ালে দাঁড়িয়ে আছি। প্রচণ্ড গরমে যাত্রীরাও অতিষ্ঠ হয়ে উঠছেন। ফেরি পেতে আরও ঘণ্টা দুয়েক সময় লাগবে। ঘাটে পশুবাহী ট্রাক থাকায় বাড়তি চাপ রয়েছে। ফেরির সংখ্যা বাড়লে এই চাপ আর থাকবে না।

(বিআইডব্লিউটিএ) দৌলতদিয়া ঘাট শাখার ব্যবস্থাপক শিহাব উদ্দিন বলেন, দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া নৌরুটে বর্তমানে ছোট-বড় মিলে ১৫টি ফেরি চলাচল করছে। ঈদ-উল আজহা উপলক্ষ্যে দু’একদিনের মধ্যে আরও দু’টি রোরো ফেরি যুক্ত হবে।

এদিকে বাংলাবাজার-শিমুলিয়া নৌরুটের বাংলাবাজার ঘাটে কোরবানির পশুবাহী ট্রাকসহ চার শতাধিক যানবাহন পদ্মা নদী পারের অপেক্ষা করতে দেখা গেছে গতকাল। বৃহস্পতিবার (১৫ জুলাই) মধ্যরাত থেকে দক্ষিণাঞ্চল থেকে রাজধানী ঢাকার উদ্দেশ্যে আসা ট্রাকের দীর্ঘ লাইন তৈরি হয়েছে ঘাট এলাকায়। ফেরিতে অগ্রাধিকার দিয়ে পশুবোঝাই ট্রাকগুলো পার করা হলেও ট্রাকের চাপ কমছে না বলে জানা গেছে। বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন করপোরেশনের (বিআইডব্লিউটিসি) বাংলাবাজার ঘাট সূত্রে জানা গেছে, গতকাল সকাল থেকে এই নৌরুটে ১২টি ফেরি চলাচল করছে। নদীতে স্রোত বেশি থাকায় ফেরি চলাচল ব্যাহত হচ্ছে। ছয়টি ডাম্প ফেরির মধ্যে তিনটি বন্ধ রয়েছে। চারটি রো রো, পাঁচটি কে-টাইপ ও তিনটি ডাম্প ফেরি চলছে। স্রোতের কারণে ফেরি পারাপারে স্বাভাবিকের চেয়ে সময় বেশি ব্যয় হচ্ছে।

ফেরিতে যানবাহন লোড করে ছেড়ে যাওয়া এবং অপর ঘাটে গিয়ে যানবাহন আনলোড করা পর্যন্ত প্রায় পাঁচ ঘণ্টা ব্যয় হচ্ছে। ফলে সারাদিনে কমে গেছে ফেরির ট্রিপের সংখ্যা। এ কারণেই ঘাটে আটকা পড়ছে পণ্য ও গরুবাহী ট্রাক। প্রতি মুহুর্তে বেড়ে চলেছে পারাপারের অপেক্ষায় থাকা যানবাহনের সংখ্যা। রাজধানীর বিভিন্ন হাটের উদ্দেশ্যে গরু, মহিষ, ছাগল, ভেড়া নিয়ে যাচ্ছেন ব্যবসায়ীরা। ঘাটে ঘণ্টার পর ঘণ্টা আটকে থেকে দুর্ভোগে পড়েছেন তারা। কড়া রোদের কারণে ট্রাকে থাকা পশুগুলো নিয়ে চিন্তায় পড়েছেন ব্যবসায়ীরা। সারাক্ষণ বাতাস দেওয়া এবং পানি দিয়ে শরীর ভিজিয়ে দিতে দেখা গেছে। গরুবাহী ট্রাকসহ টার্মিনালে তিন শতাধিক ট্রাক রয়েছে। এছাড়া টার্মিনালে ছোট গাড়ি রয়েছে প্রায় দেড় শতাধিক। ঘাটে প্রবেশের সড়কে রয়েছে ট্রাকের দীর্ঘ লাইন।

হান্নান নামে এক ট্রাকচালক বলেন, ভোর থেকে ঘাটে সিরিয়ালে আটকে আছি। গরু নিয়ে ঢাকা যাচ্ছি। কতক্ষণে ফেরিতে উঠতে পারব, তার কোনো ঠিক নাই। টার্মিনালে আটকে থাকা ট্রাকচালকরা বলেন, আমরা গত দুই-তিনদিন ধরে আটকা আছি। গরুর গাড়িগুলো আগে পার করতেছি। ফাঁকে ফাঁকে সাধারণ পণ্যবাহী ট্রাক পার করা হচ্ছে। তাছাড়া স্রোতের কারণে ফেরি ঠিকমত চলতে পারছে না। পার হতে সময় বেশি লাগছে। এজন্য ঘাটে গাড়ির জট।

অপরদিকে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁ উপজেলার কাঁচপুর সেতু থেকে মেঘনা সেতু পর্যন্ত ১৫ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে দীর্ঘ যানজটের সৃষ্টি হয়। গতকাল সকাল থেকে এই পথ দিয়ে চলাচলকারী বিভিন্ন পণ্যবাহী গাড়ির চালক ও দূরপাল্লার বাসের যাত্রীরা চরম দুর্ভোগে পড়েছেন।
সরেজমিনে দেখা যায়, মহাসড়কে বিভিন্ন পণ্যবাহী গাড়ি ও যাত্রীবাহী বাসের দীর্ঘ সারি তৈরি হয়েছে। সোনারগাঁ উপজেলার কাঁচপুর থেকে মেঘনা সেতু পর্যন্ত ১৫ কিলোমিটার এলাকায় ঈদে ঘরমুখী মানুষ চরম দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন। ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষার পরও যানবাহন সামনে এগোতে পারছে না।

এদিকে লকডাউনের বিধিনিষেধ শিথিল করার পর রাজধানী থেকে দেশের বিভিন্ন গন্তব্যে ছেড়ে যাচ্ছে ট্রেন। বাসের ভাড়া ৬০ শতাংশ বাড়ানো হলেও নির্ধারিত ভাড়াতেই অর্ধেক আসন খালি রেখে যাত্রী পরিবহন করছে ট্রেন। আন্তনগর ট্রেনের টিকিট অনলাইনে কাটার নিয়ম থাকলেও মেইল কমিউটার ট্রেনের টিকিট পাওয়া যাচ্ছে স্টেশনেই।

বঙ্গবন্ধু সেতু পশ্চিমপাড় মহাসড়কের নলকায় ঝুঁকিপূর্ণ সরু সেতু, চার লেনের কাজ চলমান ও অতিরিক্ত গাড়ীর চাপের মহাসড়কের যানজটের সৃষ্টি হচ্ছে। বিশেষ করে নলকা এলাকার সরু ও ঝুঁকিপূর্ণ সেতুটি যানজটের মাত্রা কয়েকগুন বাড়িয়ে দিয়েছে। ঝুঁকিপূর্ণ সেতুটির কারনে দিনরাত ২৪ ঘন্টায় বঙ্গবন্ধু সেতু পশ্চিমপাড় থেকে নলকা পর্যন্ত যানজট লেগেই রয়েছে। এতে ঈদযাত্রায় চালক ও যাত্রীদের প্রতিবছরের ন্যায় এবারো চরম ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে।

রাজশাহী ও রংপুর বিভাগের ১৬ জেলা এবং খুলনা বিভাগের বেশ কয়েকটি জেলার মানুষের ঘরে ফেরার অন্যতম রুট বঙ্গবন্ধু সেতু পশ্চিম মহাসড়ক। প্রতিবছর ঈদের আগে নানা কারনে মহাসড়কটি ঈদে ঘরে ফেরা মানুষের দুর্ভোগের কারণ হয়ে দাঁড়ায়। এ বছরেও মহাসড়কের নলকার সেতুটি দুর্ভোগের প্রধান কারণ হিসেবে দাঁড়িয়েছে।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

অন্যান্য সংবাদ