শনিবার, ১৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৬:৪৬ অপরাহ্ন
শিরোনাম :
সাইবার আইনের প্রত্যাহার হচ্ছে ৫৮১৮ মামলা নদী দূষণমুক্ত করা গেলে পরিবেশ উন্নত হবে ২৫ জেলায় নতুন জেলা প্রশাসক অফিস আদালত খুলেছে, যানচলাচল স্বাভাবিক ছাগলকাণ্ডে মতিউর ও তার স্ত্রী এবং সন্তানদের ব্যাংক হিসাব স্থগিত বরুড়ায় মামার বিরুদ্ধে ভাগিনার প্রতারণার গুরুতর অভিযোগ! মোশারফ প্যারিস অলিম্পিকে ডাক পেলেন অলিম্পিক রিংয়ে সাজবে আইফেল টাওয়ার প্রতি ভরি সোনার দাম এক লাখ ১৭ হাজার ৫৭৩ টাকা! বরিশাল প্লে-অফে শক্তিশালী হচ্ছেন রওশন, দুর্বল জিএম কাদের! খাদ্যপণ্যের দাম বেড়েছে ১৭ ফেব্রুয়ারি থেকে ৮ মিনিট পরপর চলবে মেট্রোরেল আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেলেন ৪৮ নারী প্রার্থী সিরিজ নির্বাচন করতে চায় ইসি

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শতবর্ষপূর্তিতে নানা আয়োজন

কেএমআর
আপডেট : জুন ৩০, ২০২১

প্রাচ্যের অক্সফোর্ড খ্যাত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শতবর্ষপূর্তি আজ। শিক্ষা ও সংস্কৃতির প্রাণকেন্দ্র এবং জাতীয় আশা-আকাঙ্ক্ষার প্রতীক এ বিশ্ববিদ্যালয়টি। শিক্ষা-গবেষণার বিস্তার, মুক্তচিন্তার উন্মেষ এবং সৃজনশীল কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে নতুন ও মৌলিক জ্ঞান সৃষ্টির লক্ষ্যে ১৯২১ সালের ১ জুলাই পথচলা শুরু হয় ঢাবির।

৩ অনুষদ, ১২ বিভাগ, ৬০ জন শিক্ষক, ৮৪৭ শিক্ষার্থী এবং ৩ আবাসিক হল নিয়ে এ বিশ্ববিদ্যালয়ের যাত্রা শুরু হয়েছিল। বর্তমানে ১৩ অনুষদ, ৮৪ বিভাগ, ১৩ ইনস্টিটিউট, ১৯৮৬ জন শিক্ষক, প্রায় ৪০ হাজার শিক্ষার্থী এবং ১৯টি আবাসিক হল ও ৪টি হোস্টেল নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে।

শততম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামান এক শুভেচ্ছা বাণীতে বলেন, ‘অকৃত্রিম শ্রদ্ধা জানাই তাদের প্রতি যাদের অনবদ্য অবদানে বিশ্ববিদ্যালয়টি চলতে চলতে আজ মহীরুহে। শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন বিশ্ববিদ্যালয় পরিবারের সবার প্রতি- শিক্ষক-শিক্ষার্থী, কর্মকর্তা-কর্মচারী, প্রাক্তন শিক্ষার্থী, অভিভাবক ও শুভানুধ্যায়ীদের।’

উপাচার্য বলেন, জ্ঞান আহরণ ও বিতরণের গৌরবগাঁথা নিয়ে শতবর্ষ পাড়ি দিয়েছে আমাদের প্রাণপ্রিয় এই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। কোভিড-১৯ আক্রান্ত পরিস্থিতিতে বৈশ্বিক নানামুখী চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করে টেকসই উন্নয়নে লক্ষ্যমাত্রা অর্জন, চতুর্থ শিল্পবিপ্লব উপযোগী বিশ্ববিদ্যালয় বিনির্মাণ এবং দক্ষ মানবসম্পদ গড়ে তোলার উদ্দেশে আমরা এগিয়ে চলছি। শিক্ষার গুণগত মান ও পরিবেশ উন্নয়ন এবং গবেষণার পরিধি সম্প্রসারণের লক্ষ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি পূর্ণাঙ্গ ‘মাস্টার প্ল্যান’ প্রণয়ন করা হয়েছে। মৌলিক ও প্রায়োগিক গবেষণার ক্ষেত্র জোরদার করার জন্য ‘ইন্ডাস্ট্রি-একাডেমিয়া’ এবং আন্তর্জাতিক সহযোগিতা বৃদ্ধির উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।

বাণীতে উপাচার্য আরও বলেন, অসাম্প্রদায়িক, প্রগতিশীল ও মানবিক মূল্যবোধসম্পন্ন দেশপ্রেমিক প্রজন্ম গড়ে তোলাই আমাদের লক্ষ্য। এ লক্ষ্য অর্জনে আমরা সবার সদয় সহযোগিতা প্রত্যাশা করি।

শতবর্ষে শিক্ষাবিদদের ভাবনা

দেশের সব সংকট মুহূর্তে মুক্তির পথ দেখানো বিশ্ববিদ্যালয়টি শততম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে এসেও শিক্ষার্থীবান্ধব বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে আত্মপ্রকাশ করতে পারেনি বলে মনে করেন শিক্ষাবিদরা। তারা মনে করছেন, রাষ্ট্রের পৃষ্ঠপোষকতার অভাব, অপ্রতুল বাজেট, সক্ষমতার অতিরিক্ত শিক্ষার্থী ভর্তি, ক্রমাগত বর্ধমান সামাজিক প্রত্যাশা ও শিক্ষার্থীদের অসহযোগিতাই এর প্রধান কারণ।

ইমেরিটাস অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এখনও সম্পূর্ণ শিক্ষার্থীবান্ধব বিশ্ববিদ্যালয় হতে পারেনি। যার মূল কারণ রাষ্ট্রও সেভাবে সহযোগিতা করেনি। আমরা যদি দেখি ব্রিটিশ এবং পাকিস্তান আমলে এ বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে শত্রুতা লেগে ছিল। ১৯৭১ সালে তো সেটা সবকিছুকে ছাড়িয়ে গেল। এই বিশ্ববিদ্যালয়কে একদম নিশ্চিহ্ন করার প্রয়াস চালিয়েছিল পাকিস্তান সরকার। একাত্তরের পরও রাষ্ট্রের সঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয়ের সম্পর্ক সম্পূর্ণ পৃষ্ঠপোষকতামূলক হয়নি, এর বিভিন্ন কারণও আছে। এছাড়া শিক্ষার্থীদের জ্ঞান আহরণের আগ্রহ কমে যাওয়াও একটি কারণ। আগ্রহ কমে যাওয়ার কারণ হলো শিক্ষার সঙ্গে জীবিকার সম্পর্ক আগের মতো নেই।

বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের সাবেক অধ্যাপক সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীবান্ধব না হওয়ার প্রথম কারণ শিক্ষার্থীদের চাপ, দ্বিতীয়ত আমাদের বাজেট অপ্রতুলতা। আমাদের বাজেট শিক্ষাবান্ধব নয়। তবে সবচেয়ে বড় কথা আমাদের শিক্ষার্থীদের শেখার আগ্রহ কমে গেছে। শিক্ষার্থীরা যদি আগ্রহী না হয় তাহলে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীবান্ধব হয়ে কী হবে। টিএসসি সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের কেন্দ্র ছিল, এখন কয়জন আগ্রহী? সবাই এখন মাঠে বসে বাদাম খায় আর মোবাইল ফোন নিয়ে ব্যস্ত থাকে। প্রত্যেকটা হলে লাইব্রেরি আছে, সবাই লাইব্রেরিতে যায় না। শিক্ষার্থীরা বিসিএসের বই নিয়ে ক্লাসে আসে, পাঠ্য বইয়ের ওপর বিসিএসের বই রাখে। তাহলে কার জন্য শিক্ষার্থীবান্ধব হবে!

তিনি আরও বলেন, আমরা যখন বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বায়ত্তশাসনের জন্য আন্দোলন করি, তখন ধারণা ছিল নিয়োগে মেধাই হবে আসল যোগ্যতা। কিন্তু বাস্তবে তা হয়নি, যা দুঃখজনক।’ তার মতে, একদিকে মেধাবীদের অনেকে শিক্ষকতা পেশায় আকৃষ্ট হচ্ছেন না, অন্যদিকে মেধাবীদের অনেককে আসতে দেওয়া হচ্ছে না। এর ফলে বিশ্ববিদ্যালয়গুলো মেধাশূন্য হয়ে পড়ছে।

শতবর্ষ পূর্তি উপলক্ষে ঢাবির কর্মসূচি

চলমান করোনা মহামারি পরিস্থিতি বিবেচনায় দিবসটি উপলক্ষে ক্যাম্পাসে সশরীরে কোনো অনুষ্ঠান হবে না, তবে অনলাইনে প্রতীকী কর্মসূচি পালিত হবে। শতবর্ষপূর্তির মূল অনুষ্ঠান বর্ণাঢ্য ও জাঁকজমকপূর্ণভাবে আগামী ১ নভেম্বর অনুষ্ঠিত হবে বলে জানায় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।

আজ অনলাইন প্রতীকী কর্মসূচির অংশ হিসেবে উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামানের সভাপতিত্বে এদিন বিকেল ৪টায় এক ভাচুর্য়াল আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হবে। এতে মূল বক্তা হিসেবে সংযুক্ত থাকবেন ভাষাসৈনিক, কলামিস্ট ও বুদ্ধিজীবী আবদুল গাফফার চৌধুরী। তিনি ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শতবর্ষ: ফিরে দেখা’ শীর্ষক ভার্চুয়াল অনুষ্ঠানে মূল বক্তব্য দেবেন।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার পূর্ব কথা

বাঙালির আর সব অর্জনের মতো ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠাও নানা প্রতিকূলতার মুখোমুখি হয়েছিল। বাঙালি নাগরিক সমাজের সঙ্গে ব্রিটিশ সরকারের দীর্ঘ বোঝাপড়ার ফসল এই বিশ্ববিদ্যালয়। বঙ্গভঙ্গ রদের অল্প কিছুদিন পরেই ব্রিটিশ ভারতের তৎকালীন ভাইসরয় লর্ড হার্ডিঞ্জ ১৯১২ সালের ২ ফেব্রুয়ারি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার ঘোষণা দেন। এই ঘোষণা পূর্ব বাংলার মানুষের মধ্যে তুমুল আলোড়ন সৃষ্টি করে। শিক্ষা, সংস্কৃতি, দর্শন, মননশীলতায় নিজেদের এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার স্বপ্ন দেখতে থাকে বাঙালি শিক্ষিত সমাজ।

১৯১২ সালের ২৭ মে গঠিত হয় ১৩ সদস্যবিশিষ্ট নাথান কমিশন। বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার সম্ভাব্যতা যাচাই-বাছাইয়ের দায়িত্ব অর্পিত হয় নাথান কমিশনের ওপর। ১৯১৩ সালে নাথান কমিশনের ইতিবাচক রিপোর্ট প্রকাশিত হয়। সে বছরের ডিসেম্বর মাসেই রিপোর্টটি অনুমোদিত হয়। এর ফলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার পথ আরও সুগম হয়। কিন্তু এর পরের বছরেই প্রথম বিশ্বযুদ্ধের দামামা বেজে ওঠে। দীর্ঘদিনের স্বপ্নপূরণের পথে শঙ্কার কারণ হয়ে দাঁড়ায় এই যুদ্ধ। তবে এত সব প্রতিকূলতার মধ্যেও নাগরিক সমাজ বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার জন্য সংগ্রাম চালিয়ে যান।

১৯১৭ সালে স্যাডলার কমিশন ইতিবাচক রিপোর্ট দিলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার চূড়ান্ত ধাপ তৈরি হয়ে যায়। অবশেষে ১৯২০ সালের ১৩ মার্চ ভারতীয় আইন সভায় ‘দ্য ঢাকা ইউনিভার্সিটি অ্যাক্ট ১৯২০’ পাস হয়। ২৩ মার্চ গভর্নর জেনারেল এই বিলে সম্মতি দেন। এর ফলে বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার বিষয়ে সব সন্দেহের অবকাশ ঘটে। এই আইনকেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার ভিত্তি হিসেবে বিবেচনা করা হয়। আইনটির বাস্তবায়নের ফলাফল হিসেবে ১৯২১ সালের ১ জুলাই আনুষ্ঠানিকভাবে যাত্রা শুরু করে ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়’।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

অন্যান্য সংবাদ