বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নেওয়ার সুযোগ নেই বলে জানিয়েছেন আইনমন্ত্রী আনিসুল হক।
সোমবার (১০ অক্টোবর) দুপুরে রাজধানীর বিচার প্রশাসন প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউটে সহকারী জজদের এক প্রশিক্ষণ কর্মশালার উদ্বোধন শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি এ কথা জানান।
আইনমন্ত্রী বলেন, আইনে যদি সুযোগ থাকে তাহলে তিনি নির্বাচন অংশ নিতে পারবেন। আর যদি না থাকে তাহলে পারবেন না। তবে আমার মনে হয়, আইনানুসারে তিনি নির্বাচন করতে পারবেন না।
আনিসুল হক বলেন, সংবিধানের নির্বাচনে অযোগ্যতা সংক্রান্ত ৬৬ অনুচ্ছেদ উল্লেখ করে আইনমন্ত্রী বলেন, তিনি (খালেদা জিয়া) আদালতের মাধ্যমে দণ্ডপ্রাপ্ত। বিএনপির সেক্রেটারি জেনারেল অনেক দেশীয় আইন মানেন না। তাদের পক্ষে অনেক রকম কথা বলাটা যে খুব একটা সারপ্রাইজিং তা না।
বিচার প্রশাসন প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউটের মহাপরিচালক বিচারপতি নাজমুন আরা সুলতানার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন আইন সচিব মো. গোলাম সারওয়ার।
‘বিএনপির মহাসচিব বিভিন্ন সময়ে বলছেন খালেদা জিয়াকে ছাড়া নির্বাচনে যাবে না এবং তত্ত্বাবধায়ক ইস্যুতে কোনো ছাড় দেবে না বিএনপি’—সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে আইনমন্ত্রী বলেন, সংবিধানের ৬৬ অনুচ্ছেদে বলা আছে— দুর্নীতির মামলায় দুই বছর বা তার অধিক সাজা হয় তাহলে এমপি নির্বাচন করতে পারবেন না। তিনি (খালেদা জিয়া) আদালতের মাধ্যমে দণ্ডপ্রাপ্ত। আমার মনে হয়, বিএনপির সেক্রেটারি জেনারেল অনেক দেশীয় আইন মানেন না। তাদের পক্ষে এ রকম কথা বলাটা যে খুব একটা সারপ্রাইজিং তা না। আমার কথা হচ্ছে, দেশে যে আইন আছে সে আইনে যদি তিনি যোগ্য হন তাহলে নির্বাচন করবেন। আর তিনি যদি অযোগ্য হন তাহলে করতে পারবেন না।
‘খালেদা জিয়ার আপিল বিচারাধীন আছে কিন্তু তারা শুনানির উদ্যোগ নিচ্ছেন না’ এমন প্রশ্নের জবাবে আনিসুল হক বলেন, তারা কি করবেন না করবেন আমি কি সে জন্য তাদের উপদেশ (অ্যাডভাইস) দেবো? তারা আপিল শুনানির উদ্যোগ নিচ্ছেন না, তার কৈফিয়ত আমাকে দিতে হয় এটা তো যৌক্তিক না।
খালেদা জিয়া আগামী নির্বাচনে অংশ নিতে পারবেন কি না এমন আরেক প্রশ্নে আইনমন্ত্রী বলেন, আইনে যা বলে তাই হবে। আমার কথার সারমর্ম হচ্ছে— আইনে যদি বলে তিনি নির্বাচন করতে পারবেন, তাহলে পারবেন। কিন্তু আইনে যদি বলে তিনি করতে পারবেন না তাহলে তিনি পারবেন না। আপতত যে আইন আছে তাতে মনে হয় না যে তিনি করতে পারবেন।
দুর্নীতির দুই মামলায় ১৭ বছরের দণ্ডিত সাবেক এ প্রধানমন্ত্রী ২০১৮ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি থেকে কারাবন্দি ছিলেন। এরমধ্যে শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে তাকে বিএসএমএমইউ-তে ভর্তি করা হয়। সেখানেই তিনি চিকিৎসাধীন ছিলেন। পরবর্তীতে ২০২০ সালের ২৫ মার্চ তার শারীরিক অবস্থা বিবেচনায় নিয়ে পরিবারের সদস্যদের আবেদনে সাজা ছয় মাসের জন্য স্থগিত রেখে তাকে সাময়িক সময়ের জন্য মুক্তি দেয় সরকার।
এরপর খালেদা জিয়া রাজধানীর গুলশানের বাসভবন ফিরোজায় যান। মেয়াদ শেষ হওয়ার পর ফের মেয়াদ আরও বাড়ানো হয়েছে। এর মধ্যে খালেদা জিয়া করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার পর চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। বর্তমানে তিনি হাসপাতালের সিসিইউতে চিকিৎসাধীন।
সবশেষে গত ১৯ সেপ্টম্বর মেয়াদ শেষ হওয়ার আগেই পরিবারের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ছয় মাসের জন্য মুক্তির মেয়াদ বাড়ানো হয়। প্রতিবার একই শর্তে তাকে কারাগারের বাইরে থাকার অনুমতি দেওয়া হয়েছে। শর্ত অনুযায়ী, মুক্ত থাকার সময়ে খালেদা জিয়া বিদেশে যেতে পারবেন না।