সর্বস্তরের মানুষের শ্রদ্ধায় সিক্ত হয়েছেন বীর মুক্তিযোদ্ধা, বিশিষ্ট রাজনীতিবিদ ও জাতীয় সংসদের উপনেতা সৈয়দা সাজেদা চৌধুরী।
সোমবার (১২ সেপ্টেম্বর) দুপুরে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের পাদদেশে প্রয়াত এ নেতার মরদেহে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন সব শ্রেণি-পেশার মানুষ।প্রথমে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পক্ষ থেকে শ্রদ্ধা জানানো হয়। এরপর শ্রদ্ধা জানান জাতীয় সংসদের স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী এবং আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের।
এরপর আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য এবং ১৪ দলের সমন্বয়ক আমির হোসেন আমু, পররাষ্ট্র মন্ত্রী আব্দুল মোমেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য আখতারুজ্জামান, নৌ-প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী, মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রী ফজিলাতুন্নেছা ইন্দিরা, বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক শ্যামা ওবায়েদসহ সর্বস্তরের জনগণ শুদ্ধা নিবেদন করেন।
এছাড়া ছাত্রলীগ, যুবলীগ, গণতন্ত্রী পার্টি ও সাম্যবাদী দলসহ বিভিন্ন দল ও সংগঠনের পক্ষ থেকে সাজেদা চৌধুরীর মরদেহে শ্রদ্ধা জানানো হয়।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, আওয়ামী লীগের প্রবীণ নেত্রী সৈয়দা সাজেদা চৌধুরীর মৃত্যুতে তিনি একজন প্রকৃত অভিভাবক হারিয়েছেন। তিনি দেশের সব গণতান্ত্রিক ও প্রগতিশীল আন্দোলনে সাজেদা চৌধুরীর বিরাট অবদানের কথা স্মরণ করেন।
সোমবার (১২ সেপ্টেম্বর) এক শোকবার্তায় সরকারপ্রধান বলেন, ‘তার মৃত্যুতে দেশের অপূরণীয় ক্ষতি হলো এবং আমরা একজন প্রবীণ রাজনৈতিক নেত্রীকে হারালাম। সাজেদা চৌধুরীর মৃত্যুতে আমি একজন প্রকৃত অভিভাবক হারালাম।’
তিনি বলেন, সাজেদা চৌধুরী ১৯৬৬ সালের ৬ দফা আন্দোলন এবং ১৯৬৯ সালের গণআন্দোলনসহ দেশের সব গণতান্ত্রিক ও প্রগতিশীল আন্দোলনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন।
প্রধানমন্ত্রীর প্রেস উইং থেকে পাঠানো শোকবার্তায় জানানো হয়েছে, আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা কৃতজ্ঞতার সঙ্গে স্মরণ করেন যে, ১৯৮১ সালে শেখ হাসিনার অবর্তমানে আওয়ামী লীগের জাতীয় অধিবেশনে সভানেত্রী হিসেবে তাকে মনোনীত করার ক্ষেত্রে সাজেদা চৌধুরী বড়ধরনের ভূমিকা রেখেছিলেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ১৯৮১ সালের ১৭ মে দেশে ফেরার পর থেকে তিনি সাজেদা চৌধুরীকে তার অভিভাবক হিসেবে পেয়েছেন। এরপর থেকে সংসদের উপনেতা, আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য এবং মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক সাজেদা চৌধুরী তার ছায়াসঙ্গী ছিলেন।
শোক বার্তায় শেখ হাসিনা বলেন, ১৯৫৪ সালে যুক্তফ্রন্টের নির্বাচনী প্রচারণাকালে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সঙ্গে সাজেদা চৌধুরীর দেখা হওয়ার পর তিনি আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে আগ্রহী হন। এরপর ১৯৫৬ সালে তিনি আওয়ামী লীগে যোগ দেন এবং এরপর থেকে সব আন্দোলনেই তিনি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। ১৯৭০ এর নির্বাচনে সাজেদা চৌধুরী ছিলেন নির্বাচিত সাতজন গণপরিষদ সদস্যের মধ্যে অন্যতম।
তিনি ১৯৬৯ থেকে ১৯৭৫ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশ মহিলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। জাতির জনক ও তার পরিবারের অধিকাংশ সদস্য নিহত হওয়ার পর সাজেদা চৌধুরী আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালনকালে জেল-জুলুম ও নির্যাতনের শিকার হন। তিনি ১৯৮৬ থেকে ১৯৯২ সাল পর্যন্ত আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং মৃত্যুর আগ পর্যন্ত প্রেসিডিয়াম সদস্য ছিলেন। সৈয়দা সাজেদা চৌধুরীর মৃত্যুতে প্রধানমন্ত্রী গভীর শোক ও দুঃখ প্রকাশ করেন।
তিনি সাজেদা চৌধুরীর রুহের মাগফিরাত কামনা করেন এবং তার শোকসন্তপ্ত পরিবারের সদস্যদের প্রতি গভীর সমবেদনা জানান।
সোমবার সকালে রাজধানীর একটি হাসপাতালে ৮৭ বছর বয়সে আওয়ামী লীগের এ প্রবীণ নেত্রী মারা যান।