১৬ই মে বন্যায় ডুবে যায় সিলেট। শহরেই ছিল কোমর পানি। এক সপ্তাহের মধ্যে সে পানি নেমেও যায়। এখনো শুকায়নি একমাস অঅগের বন্যার ক্ষত। ১৬ই জুন আবারো বন্যার আঘাত সিলেটে। এবার যেন বন্যার ভয়ঙ্কর রূপ। উজানের ঢল নামছেই। সীমান্তবর্তী চার কোম্পানীগঞ্জ, গোয়াইনঘাট, জৈন্তাপুর, কানাইঘাট উপজেলার দৃশ্য ভয়াবহ।
পানিবন্দি হয়ে লাখ লাখ মানুষ গৃহবন্দি। ঘরেও পানি। এতে করে অনাহারে দিন যাপন করছে চার উপজেলার বাসিন্দারা। চারটি উপজেলার বাইরে ওসমানীনগর, বিশ্বনাথ ও সিলেট সদরের বেশিরভাগ এলাকা পানিতে তলিয়ে গেছে। সিলেট নগরেও আঘাত হেনেছে বানের পানি। এরই মধ্যে তলিয়ে গেছে উপশহরের সি-ব্লক। প্রধান সড়কেও পানি। বিদ্যুৎ ও গ্যাস সংকটে পড়েছেন বাসিন্দারা।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের তথ্য মতে, কানাইঘাটে সুরমা নদীর পানি বিপদসীমার ১০০ সেন্টিমিটার, সিলেটে ১৩ সেন্টিমিটার, জৈন্তাপুরের সারির পানি ৩২ সেন্টিমিটার, ফেঞ্চুগঞ্জে কুশিয়ারা নদীর পানি প্রায় ৩০ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। সিলেটে প্রবল বর্ষণ অব্যাহত রয়েছে। একই সঙ্গে উজানের ভারতের মেঘালয় ও আসামের বিস্তীর্ণ এলাকায় বৃষ্টিপাত অব্যাহত থাকায় বন্যা পরিস্থিতির অবনতি আশঙ্কা করছেন পাউবো’র কর্মকর্তারা।
বন্যায় সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত কোম্পানীগঞ্জ ও গোয়াইনঘাট। কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা সদরে কোমর পানি। সরকারি দপ্তরে কাজকর্মে ব্যাঘাত ঘটছে। ঢল অব্যাহত থাকায় ৬টি ইউনিয়নের ৮০ ভাগ এলাকা পানির নিচে। প্রায় অর্ধলাখ মানুষ পানিবন্দি অবস্থায় রয়েছে। পানিবন্দি মানুষজন অনাহারে-অর্ধাহারে বসবাস করছেন। পার্শ্ববর্তী গোয়াইনঘাটের সঙ্গে সিলেটের সড়ক যোগাযোগ দু’দিন ধরে বন্ধ রয়েছে।
সালুটিকর-গোয়াইনঘাট, সারি-গোয়াইনঘাট এবং জাফলং-গোয়াইনঘাট সড়কে কোমর পানি। এ কারণে কোনো ধরনের যানবাহনই চলাচল করতে পারছে না। গোয়াইনঘাট উপজেলা সদরেও হাঁটু পানি। জৈন্তাপুরে বন্যা পরিস্থিতি আরও প্রকট হচ্ছে। সারি নদীর ঢলে প্রতিদিনই নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হচ্ছে। ঢল অব্যাহত থাকায় সিলেট-তামাবিল সড়কও রয়েছে হুমকির মুখে। কানাইঘাট উপজেলা সদরে কোমর পানি। বুধবার রাতে সুরমার ডাইক উপচে নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হয়েছে। এদিকে ফেঞ্চুগঞ্জ, বালাগঞ্জ ও ওসমানীনগর, বিশ্বনাথে বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে।
এ চারটি উপজেলার গ্রামীণ সড়কে পানি উঠে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। সিলেট সদরের খাদিমনগর, টুকেরবাজার, জালালাবাদ, কান্দিগাঁও ইউনিয়নেও প্রায় ৩০ মানুষ পানিবন্দি। স্থানীয় উপজেলা চেয়ারম্যান আশফাক আহমদ গত দু’দিন বন্যাকবলিত এলাকা পরিদর্শন করেছেন। প্রধান আবহাওয়াবিদ সাঈদ আহমদ জানিয়েছেন- সিলেটে আগামী কয়েক দিন বৃষ্টিপাত রয়েছে। বিশেষ করে মেঘালয়ে প্রবল বৃষ্টির আশঙ্কা রয়েছে। ফলে গোয়াইনঘাট ও কোম্পানীগঞ্জের পরিস্থিতি অবনতি হতে পারে। একই সঙ্গে ছাতক, দোয়ারাবাজার, বিশ্বম্বরপুর, তাহির এলাকায় ও তার উজানে বৃষ্টিপাত রয়েছে। তিনি জানান- গত বুধবার এক দিনে সিলেটে ১৪৩ মিলিমিটার ও মঙ্গলবার ৯১ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড হয়েছে।
সিলেটের বন্যা পরিস্থিতির অবনিত হওয়ায় বৃহস্পতিবার বিকেলে জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে জরুরী বৈঠক করা হয়েছে। বৈঠকে জেলা দুর্যোগ কমিটির সবাই উপস্থিত ছিলেন। সিলেটের ত্রান কর্মকর্তা নুরুল ইসলাম জানিয়েছেন, সিলেটে বন্যায় এরই মধ্যে ৬ লাখ মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন। বন্যায় কয়েকটি উপজেলা বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুত রাখা হয়েছে। ইতিমধ্যে আশ্রয়কেন্দ্রে আনা হচ্ছে বন্যাকবলিত এলাকার মানুষকে। বন্যার্তদের জন্য প্রাথমিকভাবে আড়াইশ’ টন চাল ও শুকনো খাবার বিতরণ করা হচ্ছে।
নগরেও পানি : এক মাসের ব্যবধানে ফের সিলেট নগরেও বন্যা দেখা দিয়েছে। স্থানীয়রা জানিয়েছেন- নগরীর উপশহর এলাকার সি ও ডি ব্লকে কয়েক হাজার মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন। এছাড়া- যতরপুর, সুবহানীঘাট, তেররতন, বুরহানউদ্দিন সড়কেও পানি ঢুকেছে। উপশহর সহ কয়েকটি এলাকায় মানুষের গ্যাস সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে। নগরের প্রাণকেন্দ্র তালতলা এলাকায়ও কোমর পানি। ওই এলাকা দিয়ে যানবাহন চলাচল বন্ধ রয়েছে। কাজিরবাজার, তোপখানার হাজারো মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। এছাড়া নগরীর ১০ নং ওয়ার্ডের ঘাষিটুলা, বেতের বাজার, কানিশাইল সহ কয়েকটি এলাকা গতকাল নতুন করে প্লাবিত হয়েছে। সিলেট সিটি করপোরেশনের প্রধান প্রকৌশলী নুর আজিজুর রহমান মানবজমিনকে জানিয়েছেন- ‘বৃহস্পতিবার ভোররাত থেকে সিলেট নগরীর বিভিন্ন এলাকা প্লাবিত হতে শুরু করেছে। গতকাল আমরা কয়েকটি এলাকা পরিদর্শন করেছি। যারা পানিবন্দি রয়েছে তাদের মধ্যে শুকনো খাবার বিতরণ করার প্রক্রিয়া চলছে। একই সঙ্গে আশ্রয় কেন্দ্র খোলার বিষয়টি নিয়ে মেয়র আরিফুল হক চৌধুরীর সঙ্গে পর্যালোচনা করা হচ্ছে।