ভাঙ্গাগড়া খেলায় জাতীয় পার্টি। বিগত এক মাসে দলটির শীর্ষ বেশ কয়েকজন নেতাকে দলের শীর্ষ পদ থেকে অব্যাহতি দেয়ার দলটির ভেতরে বাইরে চলছে ভাঙ্গা গড়ার খেলা।পরিস্থিতি এমন অবস্থায় পৌছেছে কেউ কাউকে বিশ^াস করতে নারাজ। দলটির এমপিদের সমন্বয়ে বেশির ভাগ অংশ জিএম কাদেরের সঙ্গে আছে বললেও ভেতরে ভেতরে তারা রওশদপন্থি গ্রæপের সঙ্গেও যোগাযোগ রাখছে। পরিস্থিতি কোন দিকে মোড় নেয় এনিয়ে দলটির ভেতরে ভয়াবহ সংকট চলছে। যদিও মিটিং মিছিলে তাদের অস্থিরতা দেখা যাচ্ছে না।
সাবেক মন্ত্রী ও জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য মশিউর রহমান রাঙ্গা ও দলটির আরেক সিনিয়র নেতা জিয়াউর হক মৃধাকে দলের সকল পদ থেকে জিএম কাদের অব্যাহতি দেয়ার কারণে দলটির গৃহবিবাদ এখন মারাত্মক আকার ধারণ করেছে।
জাপা থেকে অব্যাহতি পাওয়া নেতারা সরাসরি পার্টির চেয়ারম্যান জিএম কাদেরকে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে বলেছেন তারাও দেখে নিবেন। আবার কেউ কেউ বলছেন রওশন এরশাদের নেতৃত্বে আবারও ঘুরে দাড়াবে দলটির অব্যাহতি প্রাপ্ত নেতারা।
অনুসন্ধানে জানা গেছে বিদেশে চিকিৎসারত জাতীয় সংদের বিরোধীদলীয় নেতা রওশন এরশাদের দিকে ঝুকছে দলটির পদ বঞ্চিত নেতারা। তাদের নিয়ে জাতীয় পার্টিতে বড়োসড়ো একটা ধাক্কা দিতে চায় রওশন পন্থিরা।
এ বিষয়ে একাদশ জাতীয় সংসদের বিরোধী দলীয় নেতা বেগম রওশন এরশাদের রাজনৈতিক সচিব গোলাম মসীহ বলেন এরশাদ পত্নী ও সংসদের বিরোধী দলীয় নেতা বেগম রওশন এরশাদের নেতৃত্বে আমরা কাউন্সিল করতে কাজ করছি। ইনশাল্লাহ আগামী ২৬ নভেম্বর জাতীয় পার্টির কাউন্সিল হবে।
তিনি বলেন, রওশন এরশাদ জাতীয় পার্টির অভিভাবক। সংসদের বিরোধী দলীয় নেতা অথচ তাকে সড়িয়ে দিতে স্পীকারের কাছে যে চিঠি দিয়েছে কথিপয় কিছু লোক। আমরা তাতে আমরা বিস্মিত হয়েছি, অবাক হয়েছি।তিনি বলেন, বেগম রওশন এরশাদ দেশে ফিরবেন শীঘ্রই। এরপর পরবর্তী পদক্ষেপ নেওয়া হবে।।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, নানান নাটকীয়তায় ভরপুর জাতীয় পার্টিতে এবার চমক আসতে পারে।দলটির শীর্ষ পদে দেখা দিতে পারে জাতীয় পার্টি থেকে অব্যাহতি প্রাপ্ত নেতাদের। নানান কারণে রাজনৈতিক মাঠে আলোচনায় থাকা জাতীয় পার্টির অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে প্রভাব বিস্তারকে কেন্দ্র করে জাতীয় পার্টির প্রতিষ্ঠাতা হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদ পত্নী রওশন এরশাদ ও দলটির বর্তমান চেয়ারম্যান গোলাম মুহাম্মদ কাদেরের বিরোধ এখন প্রকাশ্যে ধারণ করেছে। কেউ কাউকে ছাড় দিতে রাজী নয়। বরং দেবর-ভাবীর দ্ব›েদ্বর কারণে দলটির মধ্যে এখন অস্থিরতা বিরাজ করছে।
এর আগে এরশাদের জীবদ্দশায় পাঁচবার ভেঙ্গেছে পার্টি। ১৯৯১ সালে প্রথম জাতীয় পার্টি থেকে বেরিয়ে আলাদা জাতীয় পার্টি করেন এম এ মতিন। ১৯৯৬ সালে জাতীয় পার্টি থেকে বেরিয়ে ‘জেপি’ নামে দল করেন আনোয়ার হোসেন মঞ্জু। ২০০১ সালে জাতীয় পার্টি থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে বিএনপি জোটে যোগ দিয়ে নির্বাচনে অংশ নেন নাজিউর রহমান মঞ্জু। ২০১৩ সালের ২০ ডিসেম্বর জাতীয় পার্টি থেকে বের হয়ে পৃথক জাতীয় পার্টি গঠন করেন কাজী জাফর আহমেদ ও মোস্তফা জামাল হায়দার।
২০১৬ সালে জিএম কাদেরকে দলের কো-চেয়ারম্যান করেন এরশাদ। রওশন এরশাদ এ সিদ্ধান্ত মেনে নিতে অস্বীকৃতি জানান। নানা নাটকীয়তার পর তাকে সিনিয়র কো-চেয়ারম্যান করা হয়। একাদশ নির্বাচনের পর প্রথমে জিএম কাদেরকে বিরোধীদলীয় উপনেতা করা হয়। পরে তাকে সরিয়ে রওশন এরশাদকে এ পদ দেন এরশাদ। জিএম কাদের তখন কো-চেয়ারমম্যান পদ হারালেও পরে রংপুরের নেতাদের চাপে ফিরে পান।গত ৩১ আগস্ট জাতীয় পার্টির প্রধান পৃষ্ঠপোষক ও জাতীয় সংসদের বিরোধী দলীয় নেতা রওশন এরশাদ এমপি ২৬ নভেম্বর দলের দশম জাতীয় কাউন্সিলের ঘোষণা দেন। এর পরই দল নড়ে চড়ে বসে।
আবারও ভাঙ্গনের মুখে জাতীয় পার্টি। রওশন এরশাদপন্থীরা ২৬ নভেম্বর কাউন্সিল করতে অটল। অন্যদিকে জিএম কাদেরপন্থীরা প্রেসিডিয়াম সভায় সর্বসম্মতিক্রমে জাতীয় পার্টি চেয়ারম্যান গোলাম মোহাম্মদ কাদেরকে বিরোধীদলীয় নেতা করতে সংসদীয় দলের সভার প্রস্তাবনার প্রতি সমর্থন জানিয়েছেন।
প্রেসিডিয়াম সভায় এটাই ইঙ্গিত দেয়া হয় রওশনপন্থীদের কাউন্সিল ঘিরে কোন পরিস্থিতির সৃষ্টি করলে যত বড় নেতাই হোক না কেন তাকে বহিষ্কার করা হবে। যদি কাউকে বহিষ্কার করা হয়, সে ক্ষেত্রে দল আরেক দফা ভাঙ্গনের মুখে পড়বে। পার্টির একাধিক নেতার মন্তব্য, জাপার নেতৃত্বে নতুন মোড় নিতে পারে শীঘ্র্রই।তবে কবে কখন কিভাবে জাপায় নেতেৃত্ব পরির্বতন আসবে এই বিষয়টি কেউ পরিস্কার করেননি।
তবে দলটির বেশ কয়েকজন সিনিয়র নেতা বলেন, যেহেতু মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ব্যক্তিগতভাবে রওশদ এরশাদকে পছন্দ্র করেন সেহেতু তাকে বিরোধী দলের আসন থেকে সড়িয়ে দেয়া সহজ হবে না। বিশেষ করে জিএম কাদের নানামূখী দৌড়ঝাপ উপর মহলে জানাজানি হয়ে যাওয়ায় জিএম কাদের সরকারের কোন সহযোগিতা পাবেন না এটা বলাই যায়।