সুশাসনের জন্য নাগরিকের (সুজন) সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদার বলেছেন, আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন কী প্রক্রিয়ায় হবে, তা ঠিক করতে রাজনৈতিক সমঝোতার বিকল্প নেই। রাজনৈতিক সমঝোতা দরকার। কোনো দল বা কেউ এককভাবে এই অবস্থা থেকে উত্তরণ সম্ভব নয়। রাজনৈতিক সমঝোতার পর সিদ্ধান্ত আসতে পারে যে কী কাঠামোতে নির্বাচন হতে পারে।
আজ শনিবার সকালে নির্বাচন কমিশন গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশে (আরপিও) সংশোধনের প্রস্তাবনা সম্পর্কিত এক ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ কথা বলেন।
তত্ত্বাবধায়ক সরকার ফিরিয়ে আনা প্রসঙ্গে বদিউল আলম বলেন, তত্ত্বাবধায়ক সরকার ফিরিয়ে আনা সম্পর্কে আমার ব্যক্তিগত কোনো প্রস্তাবনা নেই। বলটা রাজনৈতিক দলের কোর্টে মূলত। এটা জাতীয় সমস্যা। আমরা বহুদিন ধরে একটা জাতীয় সনদের কথা বলে আসছি, সবাই মিলে ঐকমত্যে পৌঁছানো প্রয়োজন। তত্ত্বাবধায়ক সরকার ফিরিয়ে আনা রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত।
সুজন মনে করেন, সুষ্ঠু নির্বাচনের ক্ষেত্রে সাংবিধানিক কাঠামো নিঃসন্দেহে একটা বাধা। এই বাধা দূর করতে কমিশনকে এখনই সুস্পষ্টভাবে সরকারকে বলতে হবে। যেন নির্বাচনকালীন প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী নিরপেক্ষভাবে দায়িত্ব পালন করে এবং কমিশন তার সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠান ম্যান্ডেট সফলতার সঙ্গে পালন করতে পারে।
এ প্রসঙ্গে সুজনের সম্পাদক বলেন, ইসির দায়িত্ব সুষ্ঠু নির্বাচন করা। তারা যদি তা না করতে পারে তাহলে ইসির উচিত সরকার ও রাজনীতিবিদদের জানানো যে তার কনস্টিটিউশনাল ম্যান্ডেটটা (সাংবিধানিক আদেশ) পূরণ করতে পারবেন না। এটা যদি ২০১৪ সালে একতরফা নির্বাচনের আগে বলতে পারতো তা হলে বাংলাদেশের ইতিহাস ভিন্ন হতো।
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, অনিয়মের অভিযোগের মধ্যে যে কোনো মুহূর্তে ভোট বাতিলের ক্ষমতা চেয়ে ইসি গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশে (আরপিও) সংশোধনের যে প্রস্তাব দিয়েছে তা অপ্রয়োজনীয়। সুজন জানায়, এই ক্ষমতা এরই মধ্যে ইসির আছে। কিন্তু তারা এই ক্ষমতা প্রয়োগ করছে না। ইসি মনে করে, তাদের ভোট স্থগিত করার ক্ষমতা আছে। রিটার্নিং কর্মকর্তা ফলাফল প্রকাশ করার পরে ইসির আর কোনো কিছু করার থাকে না। তারা এই ক্ষমতাটা চায়, কিন্তু এটা ঠিক নয়। ফলাফল গ্যাজেট আকারে প্রকাশ করার আগ পর্যন্ত তাদের ক্ষমতা আছে। এ ব্যাপারে সুস্পষ্ট আদালতের রায় আছে।
আগস্টের শুরুতে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে আরপিও বেশ সংস্কারের প্রস্তাব সরকারকে জানায় ইসি, যা গত ৮ আগস্ট আইন মন্ত্রণালয়ে ভেটিংয়ের জন্য পাঠানো হয়েছে। যদিও দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন নিয়ে করণীয় ঠিক করতে ৩৯টি রাজনৈতিক দলের সঙ্গে করা ইসির বৈঠক শেষ হয় জুলাইয়ের শেষে।
সুজন বলছে, সংলাপ শেষ হওয়ার আগেই মন্ত্রণালয়ের আরপিও এর প্রস্তাব পাঠিয়েছে ইসি। সংলাপে যে প্রস্তাবগুলো এসেছে সেগুলো যুক্ত হয়েছে কি না তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।
সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী শাহদীন মালিক বলেন, প্রস্তাব পাঠানোর আগেই আরপিও এর বিষয়ে কাজ শুরু হয়েছে বলে ধরে নিতে পারি। এটা রাজনৈতিক দলের মতামত নিয়ে করা উচিত ছিল।
তিনি বলেন, প্রস্তাব পাঠানোর আগে এটা জনসম্মুখে দেওয়া উচিত ছিল, সবার মতামত নেওয়া উচিত ছিল। এই প্রক্রিয়াটি আমার কাছে স্বচ্ছ মনে হচ্ছে না।
সংবাদ সম্মেলনে সুজন আরও জানায়, দলীয় সরকারের অধীনে ২০১৪ ও ২০১৮ সালে পর পর দুটি ব্যর্থ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। দলীয় সরকারের অধীনে সব নির্বাচন ছিল অগ্রহণযোগ্য। তাই বর্তমান সাংবিধানিক কাঠামোতে এবং প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সীমাহীন দলীয়করণের কারণে আগামী নির্বাচন যে সুষ্ঠু হবে না তা নিশ্চিত করেই বলা যায়। আরপিওতে না ভোটের বিধান যুক্ত করা, হলফনামার ছক পরিবর্তন ও পরিবর্ধন করা, বিদেশে অবস্থানরতদের ভোটাধিকার নিশ্চিত করা, হলফনামা মিথ্যা তথ্য প্রদানকারীদের মনোনয়নপত্র বাতিলে সুস্পষ্ট বিধান রাখার প্রস্তাব করে সুজন।