শুক্রবার, ১০ মে ২০২৪, ১০:৫০ পূর্বাহ্ন

নাইট কোচে ডাকাতি, নারীযাত্রীকে সঙ্ঘবদ্ধ ধর্ষণ

রিপোর্টারের নাম :
আপডেট : আগস্ট ৪, ২০২২

কুষ্টিয়া থেকে ঢাকাগামী নাইট কোচে যাত্রীবেশে উঠে ডাকাত দল প্রথমে গাড়ির নিয়ন্ত্রণ নিয়ে যাত্রীদের হাত পা চোখ বেঁধে মারধর ও পরে সাথে থাকা সম্পদ লুট করে। এক নারী যাত্রীকে ধর্ষণ এবং শেষে পথ পরিবর্তন করে টাঙ্গাইলের মধুপুরের রাস্তার পাশের বালির ডিবিতে বাস উল্টিয়ে দিয়ে পালিয়ে যায়।

আন্তঃজেলা ডাকাত দলের ওই সদস্যরা টানা তিন ঘণ্টা বাসের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে যাত্রীদের ওপর এমন তাণ্ডব চালায় বলে জানা গেছে।

মঙ্গলবার দিবাগত রাত সাড়ে তিনটার দিকে মধুপুরের রক্তিপাড়া জামে মসজিদের উল্টোপাশে মজিবরের বাড়ির সামনের বালির ডিবিতে বাস উঠিয়ে দিয়ে ডাকাত দল পালিয়ে যায়। কুষ্টিয়ার বড়াইগ্রাম থেকে ঈগল পরিবহণের বাসটি ৩০-৩৫ জন যাত্রী নিয়ে ঢাকার উদ্দেশে বুধবার ছেড়ে আসার পথে এমন ঘটনা ঘটে।

নাটোরের বড়াইগ্রামের বাসিন্দা ফল ব্যবসায়ী হাবিবুর রহমান হাবিব ওই বাসের নিয়মিত যাত্রী। বাসের সুপার ভাইজার রাব্বি ও হেলপার দুলাল তার পূর্বপরিচিত। কিন্তু এই বাসের এবারের চালক নতুন ছিলেন। তিনি বড়াইগ্রামের তরমুজ চত্বর থেকে আমড়া, কাঁঠাল ও তালসহ বিভিন্ন ফল ঢাকার গুলশানে নিয়ে যেতে বাসে উঠেন। বাসটি সিরাজগঞ্জের কাছাকাছি দিবারাত্রি হোটেলে নৈশভোজের জন্য যাত্রা বিরতি দেয়। পরে রাত দেড়টার দিকে আবার যাত্রা শুরু করে। পথে কাঁধে ব্যাগ বহন করা ১০-১২ জন তরুণ যাত্রী উঠেন। তখন গাড়ির যাত্রী সবাই প্রায় ঘুমে। বাসটি বঙ্গবন্ধু সেতু পার হওয়ার পর যাত্রীবেশে থাকা ওই তরুণ দল অস্ত্রের মুখে একে একে ঘুমন্ত যাত্রীদের সবাইকে বেঁধে ফেলে। প্রত্যেক যাত্রীর চোখ ও মুখ বেঁধে চালককেও জিম্মি করে বাসের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নেয়। পাঁচ মিনিটের মধ্যে সব যাত্রীর কাছ থেকে মোবাইল, টাকা, গহনা লুট করে নেয়। তারপর এক নারী যাত্রীকে ধর্ষণ করে। পরে বাস বিভিন্ন রাস্তায় ঘুরিয়ে ও তিন ঘন্টার মতো নিয়ন্ত্রণে রাখে। শেষে পথ পরিবর্তন করে টাঙ্গাইল-ময়মনসিংহ মহাসড়কের মধুপুর উপজেলার রক্তিপাড়া জামে মসজিদের পাশে বালির ডিবিতে ঠেকিয়ে ডাকাত দল নেমে যায়।

বাসের যাত্রী হাবিবুর রহমান বলেন, সকালে স্থানীয় বাসিন্দারা আমাদের উদ্ধার করেছে।

কুষ্টিয়ার দৌলতপুর থানার তারাগুনিয়া গ্রামের শিল্পী বেগম অসুস্থ মেয়ে জেসমিনকে চিকিৎসার জন্য ঢাকায় নিয়ে যাচ্ছিলেন। বুধবার কানের অপারেশন হওয়ার কথা ছিল।

তিনি জানান, তার কাছে থাকা ৩০ হাজার টাকা ও মোবাইল ছিনিয়ে নিয়েছে ডাকাতরা। এ সময় তার স্বামী পিয়ার আলীকে ছুরি দিয়ে আঘাত করে আহত করেছে ডাকাতরা।

বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করেন নারায়ণগঞ্জের বাসিন্দা আব্দুর রশিদ। তিনি নাটোর থেকে বাড়ি যাচ্ছিলেন অসুস্থ মাকে দেখার জন্য। বেতনের ২২ হাজার ৮শ’ টাকা ডাকাতরা নিয়ে গেছে।

বুধবার ৩ আগস্ট সকালে সংবাদ পেয়ে মধুপুর থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে তাদের উদ্ধার করে করে থানায় নিয়ে আসেন। গাড়িতে থাকা দেশীয় অস্ত্র উদ্ধারের কথা স্বীকার করেছেন মধুপুর থানার উপপরিদর্শক এনামুল হক। বিকাল ৫টায় ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা যায়, ডিবি পুলিশের একটি দল তদন্ত কাজ চালাচ্ছে। পুলিশের সহযোগিতায় একদল উদ্ধারকর্মী বাস উদ্ধার করেছেন। প্রথমে এটিকে নিছক দুর্ঘটনা মনে করা হয়েছিল। পরে আস্তে আস্তে সব খোলাসা হতে থাকে। দুপুরের পরে সব পরিষ্কার হতে থাকে।

টাঙ্গাইলের পুলিশ সুপার সরকার মোহাম্মদ কায়সার ঘটনাস্থল পরিদর্শনে আসেন। থানায় অবস্থান করে বিকাল থেকে তিনিসহ সংশ্লিষ্টরা বাসযাত্রী ও সংশ্লিষ্টদের জিজ্ঞাসাবাদ করেন। এ সময় ময়মনসিংহ থেকে আসা ডিএনএ পরীক্ষাগারের কর্মীদের থানায় অবস্থান করতে দেখা গেছে।

থানার গোল ঘরে বাসযাত্রী নারী-পুরুষ ও শিশুদের অবস্থান করতে দেখা গেছে। ওসির কক্ষে বসে থাকা বাসযাত্রী নাটেরের গুরুদাসপুরের বিয়াঘাট গ্রামের আলী আহসান, কুষ্টিয়ার দৌলতপুরের বাগুয়ান গ্রামের মিজানুর রহমান মিজান এমন ঘটনার কথা স্বীকার করেছেন।

মধুপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ মাজহারুল আমিন এমন ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে বলেছেন, সমস্ত ঘটনার রহস্য উদঘাটনে তদন্ত কাজ চলছে। বাসের এক যাত্রীকে বাদী করে মামলার প্রক্রিয়া চলছে। কাউকে আটক বা জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে কিনা জানতে চাইলে তিনি জানান, সবদিক বিবেচনায় তদন্ত চলছে। বলার মতো তথ্য এখনও আসেনি।

এ ব্যাপারে টাঙ্গাইলের পুলিশ সুপার সরকার মোহাম্মদ কায়সার জানান, কুষ্টিয়ার এক যাত্রী বাদী হয়ে অজ্ঞাত ১০-১২ জনকে আসামী করে মামলা করেছেন। তদন্তের অগ্রসর আছে। এ পর্যন্ত কাউকে আটক করা হয়নি।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

অন্যান্য সংবাদ