বর্ষাকাল এলেই রাজধানীতে বাড়তে থাকে ডেঙ্গু আতঙ্ক। বাড়তে থাকে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যাও। গেলো কয়েক বছর ধরে ঢাকায় ডেঙ্গু আক্রান্তের হার চরম মাত্রায় পৌঁছেছে, ঘটেছে অনেক প্রাণহানীও।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বিরতি দিয়ে বৃষ্টির মাঝে তাপমাত্রা ও বাতাসের আর্দ্রতা বেশি হলে বাড়ে মশার বংশবিস্তার। বিশেষ করে গত ২-৩ বছরে জুন থেকে সেপ্টেম্বরে বাড়তে দেখা যায় ডেঙ্গুর প্রভাব। এবারও অনেকটা তেমনই হচ্ছে। মে মাসের মধ্যভাগ থেকেই শুরু হয়েছে ডেঙ্গুর চোখ রাঙানি।
স্বাস্থ্য অধিদফতরের তথ্য অনুযায়ী, চলতি মাসের গত ২৮ দিনে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়েছেন ১২১ জন মানুষ। বর্তমানে ঢাকার বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন অন্তত ৪২ জন রোগী। ঢাকার বাইরে আছেন মাত্র একজন ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগী।
স্বাস্থ্য অধিদফতরের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশান সেন্টার ও কন্ট্রোল রুম জানায়, ২৮ মে সকাল পর্যন্ত বিগত ২৪ ঘণ্টায় ঢাকার বিভিন্ন হাসপাতালে ১৫ জন ডেঙ্গু রোগী ভর্তি হয়েছেন। তার আগেরদিন এই সংখ্যা ছিলো ৬ জন।
রাজধানীর হাসপাতালগুলোর তথ্য যাচাই করে জানা যায়, বর্তমানে সবেচেয়ে বেশি ২৩ জন ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগী ভর্তি রয়েছেন মুগদা মেডিকেল হাসপাতালে। এছাড়া ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপতালে ৩ জন, মিডফোড ও শিশু হাসপাতালে একজন করে ভর্তি রয়েছেন। বাকি ৭ জন আছেন বিভিন্ন বেসরকারি হাসপাতালে। ঢাকার বাইরে বাগেরহাটে ডেঙ্গু আক্রান্ত একজন রোগী চিকিৎসাধীন থাকার তথ্য দিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদফতর।
স্বাস্থ্য অধিদফতর থেকে ডেঙ্গু আক্রান্তের পরিসংখ্যান যাচাই করে দেখা যায়, চলতি বছরের জানুয়ারি মাসে ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগী ছিল ১২৬ জন। কিন্তু ফেব্রুয়ারি থেকে কমতে থাকে আক্রান্তের হার। ফেব্রুয়ারি ও মার্চ মাসে ২০ জন করে এবং এপ্রিলে এই রোগে আক্রান্ত হন ২৩ জন মানুষ। কিন্তু মে মাসের মধ্যভাগে আবারও বাড়তে থাকে ডেঙ্গু আক্রান্তের হার। চলতি মাসে আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়ায় ১২১ জনে।
পরিসংখ্যানে দেখা যায়, গত ১৬ মে থেকে ধিরে ধিরে ঊর্ধ্বমূখী হচ্ছে ডেঙ্গু। ১০ থেকে ১৫ মে আক্রান্ত হয়েছেন ৬ জন রোগী। কিন্তু ১৬ মে হঠাৎ করে আক্রান্ত হন ৮ জন। তার পরদিন আরও বেড়ে সেই সংখ্যা দাঁড়ায় ১২ জনে। তারপর ১৮ এবং ১৯ মে ৫ জন করে ডেঙ্গু রোগী ভর্তির তথ্য পাওয়া যায়।
২০ মে বিরতি দিলেও ২১ মে ৯ ও ২২ মে ৬ জন আক্রান্ত হয়ে ভর্তি হন হাসপাতালে। এরপর ২৩ মে এক লাফে বেড়ে যায় ১৫ জনে, তার পরদিন আক্রান্ত হন ১২ জন। পরের তিনদিনে ১৯ জন আক্রান্ত হন এবং সবশেষ শনিবার আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হন ১৫ জন মানুষ। চিকিৎসকরা বলছেন, যেভাবে রোগীর সংখ্যা বাড়ছে তাতে এখনই পদক্ষেপ না নিলে পরিস্থিতি ভয়াবহ আকার ধারণ করতে পারে।
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণীবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক ও কীটতত্ত্ববিদ ড. কবিরুল বাশার বলেন, বৃষ্টি শুরু হলেই পরিত্যক্ত পাত্রে পানি জমা শুরু হয়। জমে থাকা পানি পেলেই সেখানে ডেঙ্গি মশা ডিম পাড়ে এবং তাতে ডেঙ্গুর বংশবৃদ্ধি হয়। এখন যেহেতু বিরতি দিয়ে দিয়ে নিয়মিতই বৃষ্টি হচ্ছে এখনই মশার প্রজননের সময়। গত কয়েকদিনে হাসপাতালে ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীর পরিমান বাড়াই ইঙ্গিত দিচ্ছে যে ডেঙ্গুর বিস্তার শুরু হয়েছে। এখন হয়তো আক্রান্তের হার কম। তবে এখন নিয়ন্ত্রণ না করলে আগস্ট বা সেপ্টেম্বরে চরম আকার ধারণ করতে পারে।
পরিস্থিতি মোকাবিলায় এখন থেকেই ব্যক্তি পর্যায়ে সচেতনতার পাশাপাশি সিটি করপোরেশনকেও তৎপর হওয়ার পরামর্শ দেন এই গবেষক।
ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ব্রিগেঃ জেনাঃ মোঃ জোবায়দুর রহমান বলেন, ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণ করা কোনোভাবে সিটি করপোরেশনের পক্ষে এককভাবে সম্ভব না। আমরা চেষ্টা করছি জনগণকে নিয়েই সমস্যার আগাম সমাধান করতে। ইতোমধ্যে জনগণের মাঝে দায়িত্বনুভুতি জাগ্রত করতে আমরা গত ১৭ থেকে ২৬ মে পর্যন্ত বিশেষ অভিযান পরিচালনা করেছি। এ সময় অনেককে জরিমানাও করেছি।
তিনি আরও বলেন, আমাদের নিয়মিত কীটনাশক প্রয়োগ অব্যাহত আছে। আমরা জনগণকে বলছি তারা যেন কোথাও পানি জমিয়ে না রাখে। সব পাত্র যেন উল্টে রাখে। যদি কোনো জায়গা তাদের আয়ত্বের বাইরে থাকে প্রয়োজনে আমাদের সহযোগিতা নিতে পারে। এই সব তথ্য জনগণকে জানাতে আমরা মসজিদের ইমামদেরও হেল্প নিচ্ছি।
মেয়রের আহ্বানে সাড়া দিয়ে সপ্তাহে একদিন পরিচ্ছন্নতা দিবস পালনে নগরবাসীকে এগিয়ে আসারও আহ্বান জানান ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা।