ঈদকে সামনে রেখে শেষ মুহূর্তে রাজধানী ছাড়ছেন অসংখ্য মানুষ। অন্যান্য বারের মতো এবারও তাদের সঙ্গী নানা ভোগান্তি। বাস-ট্রেনের টিকিটের হাহাকারের মধ্যে যোগ হয়েছে যানজট। দীর্ঘ সময় যানজটে আটকা পড়ে ভ্যাপসা গরমে অতিষ্ঠ বাড়িফেরা মানুষজন।
গত রোববার (১৮ জুলাই) সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে দেওয়া এক পোস্টে ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার জানান, করোনাভাইরাসের সংক্রমণ প্রতিরোধে সরকারের দেওয়া বিধিনিষেধ শিথিল ঘোষণার পর থেকেই দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে ঈদ করতে লাখ লাখ মানুষ ঢাকা ছাড়ছেন। এর মধ্যে গত বৃহস্পতিবার (১৫ জুলাই) ও শুক্রবার (১৬ জুলাই) দুই দিনে ঢাকা ছেড়েছেন প্রায় ১৭ লাখ মানুষ। শুধুমাত্র মোবাইল সিম ব্যবহারকারীর ঢাকা ছেড়ে যাওয়ার পরিসংখ্যান এটি।
এদিকে রাজধানীর বনানী হয়ে বিমানবন্দর এলাকা দিয়ে যেসব গাড়ি টঙ্গী ও গাজীপুরে প্রবেশ করছে সেসব গাড়ির যাত্রীদের পোহাতে হচ্ছে সীমাহীন দুর্ভোগ। এ সড়কে সকাল ৮টা থেকে তীব্র যানজট সৃষ্টি হয়েছে। ঘণ্টার পর ঘণ্টা একই জায়গায় গাড়িতে বসে থাকতে হচ্ছে যাত্রীদের।
অন্যদিকে বিমানবন্দরের এ যানজটের প্রভাব পড়েছে কুড়িল-বিশ্বরোড ও প্রগতি সরণির রাস্তায়ও। সকাল থেকে প্রগতি সরণি এলাকায় হালকা যানজট সৃষ্টি হচ্ছে। যা বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে তীব্র যানজটে রূপ নেয়।
সরেজমিনে দেখা যায়, বনানী ফ্লাইওভার থেকে উত্তরা পর্যন্ত দীর্ঘ যানজট সৃষ্টি হয়েছে। যানজটের কারণে সকাল থেকেই ওই এলাকায় যান চলাচল বন্ধ রয়েছে। অনেক বাস বনানী ফ্লাইওভার পার হয়ে কুড়িল বিশ্বরোড এলাকায় আটকে আছে। অতিরিক্ত গাড়ির চাপে কুড়িল বিশ্বরোড থেকে বিমানবন্দর পর্যন্ত সড়কে যান চলাচল বন্ধ রয়েছে। তবে এ যানজট শুধুমাত্র ঢাকা থেকে বের হওয়ার সড়কে দেখা গেছে। বিপরীত পাশের রাস্তায় যান চলাচল স্বাভাবিক রয়েছে।
যানজটে আটকে থাকা যাত্রীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, প্রতিবার ঈদ যাত্রায় তাদের ভোগান্তি পোহাতে হয়। কিন্তু এবার করোনা মহামারি কারণে রাজধানীতে মানুষের যাতায়াত কম থাকায় তারা আশা করেছিলেন ভোগান্তি কম হবে। কিন্তু রাস্তায় অন্যান্য বারের মতোই যানজটে সীমাহীন ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে তাদের।
মো. আলকাস ঢাকায় একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করেন। তিনি মহাখালী বাস টার্মিনাল থেকে এনা পরিবহনের একটি বাসে শায়েস্তাগঞ্জ যাচ্ছেন। বাস ছাড়ার কিছুক্ষণ পরই যানজটে আটকা পড়েন তিনি।
তিনি বলেন, মহাখালী থেকে ছাড়ার পর বনানী ফ্লাইওভার পার হয়ে বিমানবন্দর সড়কে পৌঁছানোর সঙ্গে সঙ্গে যানজটে আটকা পড়ে আমাদের বহনকারী বাস। দীর্ঘক্ষণ গাড়ি এক জায়গায় আটকে আছে। মনে হচ্ছে এ যানজট পেরিয়ে বাড়ি যাওয়া কঠিন হয়ে যাবে।
সিলেটগামী এনা পরিবহনের বাসের চালক মো. হায়দার বলেন, ঈদ যাত্রায় এমন যানজট প্রতি বছরই হয়। তবে এবার বিমানবন্দর এলাকায় উন্নয়নকাজের জন্য সড়কের বিভিন্ন অংশ ভাঙা। কিছু অংশে সড়ক সরু হয়ে গেছে। তাই স্বাভাবিক গতিতে যানবাহন চলাচল করতে পারে না। এ কারণেই এ সড়কে তীব্র যানজট দেখা দিচ্ছে। যা আশপাশের বিভিন্ন সড়কেও প্রভাব ফেলছে।
এদিকে প্রগতি সরণি সড়কে যানজটে আটকে থাকা রাইদা পরিবহনের চালক মিঠু শেখ বলেন, গত দুই দিন ধরেই বিমানবন্দর সড়কের যানজট। এ যানজটের প্রভাব পড়ছে প্রগতি সরণি সড়কেও। এখন কিন্তু ঢাকায় মানুষ অনেক কম। রাস্তাও প্রায় ফাঁকা, তবে ঈদ যাত্রার কারণে বিপুল পরিমাণ গাড়ি ঢাকা ছাড়ছে। এজন্য ওই সড়কে যানজটের তীব্রতা অনেক বেশি। আগামীকাল পর্যন্ত এ অবস্থা থাকবে।
এ বিষয়ে ডিএমপি ট্রাফিকের উত্তরা বিভাগের সহকারী পুলিশ কমিশনার (উত্তরা পশ্চিম জোন) সাইফুল মালিক জানান, ঈদযাত্রা শেষ পর্যায়ে আছে। মানুষজন এখন দলবেঁধে রাজধানী ছেড়ে গ্রামে ফিরছে। এ সময়ে সামান্য যানজট হবে এটাই স্বাভাবিক। তবে আজকে শুধু ঈদযাত্রার গাড়ির চাপে বিমানবন্দর থেকে উত্তরা পার হয়ে টঙ্গী এলাকা পর্যন্ত যানজট দেখা দিয়েছে। কিন্তু রাস্তার অন্যপাশে যান চলাচল স্বাভাবিক রয়েছে।