প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ভবিষ্যতে যারা দক্ষতার সঙ্গে স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব রক্ষায় দায়িত্ব পালন করতে পারবেন, নৌ ও বিমান বাহিনীর সেসব সদস্যকে পদোন্নতি দিন।
বহিঃশত্রুর আক্রমণ হতে দেশকে রক্ষা করতে সশস্ত্র বাহিনীকে সব সময় প্রস্তুত থাকারও আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। উদার পররাষ্ট্রনীতি এবং যুদ্ধ নয় শান্তির পক্ষে বাংলাদেশের অবস্থানের কথাও উল্লেখ করেন তিনি।
রোববার (০৫ সেপ্টেম্বর) নৌ ও বিমান বাহিনীর নির্বাচনী পর্ষদ (প্রথম পর্ব) ২০২১-এ ভার্চ্যুয়ালি অংশ নিয়ে এ কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী।
ঢাকা সেনানিবাসের নৌবাহিনী এবং বিমানবাহিনী সদর দপ্তরে অনুষ্ঠিত এ সভায় গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সে অংশ নেন সরকারপ্রধান।
বাংলাদেশের সশস্ত্র বাহিনীর আধুনিকায়ন ও সক্ষমতা বৃদ্ধি করতে সরকারের বিভিন্ন পদক্ষেপের কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘এখানে একটি কথা স্পষ্ট বলতে চাই, আমরা কারও সঙ্গে যুদ্ধ করতে চাই না। ’
টানা তিনবারের সরকারপ্রধান বলেন, ‘আমরা যুদ্ধ চাই না, আমরা শান্তি চাই। কারণ শান্তি ছাড়া কোনো দেশের উন্নতি করা সম্ভব নয়। যুদ্ধ ধ্বংস ডেকে আনে, আমরা ধ্বংসের পথে যেতে চাই না। কিন্তু কেউ যদি আক্রমণ করে, বহিঃশত্রুর আক্রমণ থেকে দেশকে রক্ষা করার সব রকম প্রস্তুতি আমাদের থাকতে হবে। ’
তিনি বলেন, ‘সব সময় প্রশিক্ষণ এবং সরঞ্জামাদি সবদিক থেকে আমাদের যতটুকু ক্ষমতা আছে তার মধ্যে দিয়ে আমাদের সেভাবে প্রশিক্ষণও অব্যহত রাখতে হবে এবং আধুনিক প্রযুক্তি সম্পন্ন হতে হবে। ’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব রক্ষার জন্য প্রস্তুত থাকতে হবে। বিশ্ব যেখানে এগিয়ে যাচ্ছে। নতুন নতুন প্রযুক্তি আসছে, প্রযুক্তিনির্ভর হয়ে যাচ্ছে বর্তমান বিশ্ব। আধুনিক বিশ্বের সঙ্গে যেন তাল মিলিয়ে আমরা চলতে পারি, সেই প্রস্তুতিও আমাদের থাকতে হবে। ’
বাংলাদেশ দক্ষতা নিয়ে প্রতিটি দেশের সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক রেখে এগিয়ে যাচ্ছে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নীতি সকলের সঙ্গে বন্ধুত্ব, কারও সঙ্গে বৈরিতা নয়। আমি এইটুকু বলতে পারি, আমরা অত্যন্ত দক্ষতার সঙ্গে প্রতিটি দেশের সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক রেখে এগিয়ে যাচ্ছি। ’
তিনি বলেন, ‘আমাদের দেশের সার্বিক উন্নয়নে যার কাছ থেকে যতটুকু সহযোগিতা নেওয়া দরকার বা আমাদের উন্নয়ন সহযোগী যারা হবে সকলের সঙ্গে একটা ভালো সদ্ভাব রেখে, ভালো সম্পর্ক রেখে আমরা কাজ করে যাচ্ছি। ’
দক্ষদের পদোন্নতি দেওয়ার আহ্বান জানিয়ে নৌ ও বিমান বাহিনীর নির্বাচনী পর্ষদ সদস্যদের উদ্দেশে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আপনারা পদোন্নতির জন্য যে পদ্ধতিগুলো নিয়েছেন টিআরএসিই-ট্রেস (টেবুলেটেড রেকর্ড অ্যান্ড কম্পারেটিভ ইভালুয়েশন) আমি মনে করি, এটা একটা আধুনিক পদ্ধতি। এই পদ্ধতির ভিত্তিতেই আপনাদেও জ্ঞান এবং প্রজ্ঞা দিয়ে আপনারা নির্বাচনী পর্ষদ আগামী দিনে যারা দক্ষতার সঙ্গে নৌবাহিনী এবং বিমান বাহিনী পরিচালনা করবে তাদের নির্বাচিত করবেন। ’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘ভবিষ্যতে আমাদের স্বাধীনতা সার্বভৌমত্ব রক্ষায় দক্ষ যারা, তারা প্রমোশন পেয়ে প্রত্যেকটি বাহিনী পরিচালনার দায়িত্ব পাবে এবং দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাবে। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আদর্শ নিয়ে, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা নিয়ে বাংলাদেশ চলবে এবং বাংলাদেশ হবে ভবিষ্যতে উন্নত-সমৃদ্ধ সোনার বাংলাদেশ। ’
তিনি আরও বলেন, ‘আমি এটাও বলব যে, অনেক ক্ষেত্রে দেখা যায় অনেকে কর্তব্য পালনে অনেক দক্ষতার পরিচয় দিতে পারে। কাজে তারাও যেন অবহেলিত না হয় সেদিকটাও আপনারা বিবেচনা করবেন। ’
অনুষ্ঠানে নৌবাহিনী প্রধান এডমিরাল এম শাহীন ইকবাল এবং বিমান বাহিনী প্রধান এয়ার চিফ মার্শাল শেখ আব্দুল হান্নান প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানিয়ে স্বাগত বক্তব্য দেন।
আইএসপিআর জানায়, নৌবাহিনীর কর্মকর্তাদের পদোন্নতির লক্ষ্যে নৌবাহিনী সদর দপ্তরে আয়োজিত নৌবাহিনীর নির্বাচনী পর্ষদের মাধ্যমে ক্যাপ্টেন থেকে কমডোর, কমান্ডার থেকে ক্যাপ্টেন, লে. কমান্ডার থেকে কমান্ডার পদবিতে পদোন্নতির জন্য সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
এছাড়া বিমান বাহিনীর সদর দপ্তরে আয়োজিত বিমান বাহিনীর নির্বাচনী পর্ষদের মাধ্যমে বিমান বাহিনীর গ্রুপ ক্যাপ্টেন থেকে এয়ার কমডোর, উইং কমান্ডার থেকে গ্রুপ ক্যাপ্টেন এবং স্কোয়াড্রন লিডার থেকে উইং কমান্ডার পদে যোগ্য প্রার্থীদের পদোন্নতির ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।