চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং বলেছেন, একতা ও সমতাভিত্তিক এবং ভারসাম্যপূর্ণ ও অন্তর্ভুক্তিমূলক উচ্চ বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন উন্নয়ন অংশীদারিত্ব গড়ে তোলার ওপর জোর দিতে হবে।
বৈশ্বিক উন্নয়ন সংলাপের শীর্ষ বৈঠকে ভার্চুয়ালি সংযুক্ত হয়ে এসব কথা বলেন প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং। রাশিয়া, ভারত, ব্রাজিল, মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়াসহ ১৮ টি দেশের রাষ্ট্র ও সরকার প্রধান এই বৈঠকে ভার্চুয়ালি অংশ নেন। প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন।
এ সময় তিনি বলেন, ‘একত্রিতভাবে বৈশ্বিক উন্নয়নের একটি নতুন যুগকে ধারণ করতে হবে, লালন করতে হবে। যেন সবাই লাভবান হয় এমন সমৃদ্ধি অর্জিত হয়।’
‘একটি নতুন যুগের বৈশ্বিক উন্নয়নে উচ্চ বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন অংশীদারিত্ব গড়ি’ শিরোনামে দেওয়া বক্তব্যে শি জিনপিং আরও বলেন, ‘মানবতার জন্য উন্নয়ন সময়ের গণ্ডিতে বাঁধা নয়, এটা অবিরাম চলমান। অব্যাহত উন্নয়নের মধ্য দিয়েই মানুষের সুখী, সমৃদ্ধ জীবনের স্বপ্ন পুরণ হয়, সামাজিক স্থিতিশীলতা প্রতিষ্ঠিত হয়। জাতীয় বাস্তবতার আলোকে উন্নয়নশীল জাতিসমূহ সামাজিক ও অর্থনৈতিক উন্নয়নের জন্য নিরলসভাবে কাজ করে চলেছে।’
‘বর্তমানে উদীয়মান বাজার ও উন্নয়নশীল দেশগুলো বিশ্ব অর্থনীতির অর্ধেক’ উল্লেখ করে শি জিনপিং বলেন, ‘বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি, শিক্ষা, সামাজিক উন্নয়ন, সংস্কৃতিসহ অন্যান্য খাতে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি সাধিত হয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘আমরা এমন একটা সময়ে বৈঠকে বসেছি যখন করোনা মহামারি আমাদের যুগ যুগ ধরে সাধিত উন্নয়নকে ধ্বংস করে দিচ্ছে, টেকসই উন্নয়নের জন্য জাতিসংঘ ঘোষিত ২০৩০ সালের লক্ষ্যমাত্রা অর্জন বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। উত্তর-দক্ষিণ ফারাক অব্যাহত রয়েছে এবং জ্বালানি ও খাদ্য সংকটের উদ্ভব অব্যাহত আছে।’
একইসময়ে বিশ্বের প্রায় সব দেশের মানুষ শান্তি, উন্নয়ন ও সহযোগিতা চায় উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘একতার মধ্য দিয়ে উন্নয়নশীল দেশ ও উদীয়মান বাজার অর্থনীতির দেশগুলো আরও বেশি শক্তি অর্জন করতে পারে।’
তিনি বলেন, ‘বর্তমান যুগ চ্যালেঞ্জের যুগ হলেও একইসঙ্গে এটি অপার সম্ভাবনার যুগ।’
একত্রিত পদক্ষেপ এবং দৃঢ় আস্থা প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে বিশ্বে উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখা যায়। এজন্য একটি সুপারিশমালা দিয়েছেন তিনি।
প্রথমত, আন্তর্জাতিক এজেন্ডাগুলোর কেন্দ্রে উন্নয়নকে রেখে একে প্রোমোট করতে হবে। এরজন্য আন্তর্জাতিক সহমত প্রতিষ্ঠা জরুরি বলে মনে করেন তিনি।
দ্বিতীয়ত, কাঙ্ক্ষিত উন্নয়নের জন্য উন্মুক্ত বৈশ্বিক অর্থনৈতিক ও সুশাসন ব্যবস্থা এবং প্রাতিষ্ঠানিক পরিবেশ গড়ে তোলার ওপর সব দেশকে জোর দিতে হবে।
চীনা প্রেসিডেন্ট বলেন, ‘যেসব দেশ তথাকথিত জোট বাঁধার প্রচেষ্টায়রত দিন শেষে তারাই একঘরে হয়ে যাবে। বেশিরভাগ নিষেধাজ্ঞা কারোর স্বার্থের অনুকূলে নয়। বিচ্ছিন্নকরণের চেষ্টা ও সরবরাহ লাইন বাধাগ্রস্ত করা কারও জন্য উপকারী নয়, টেকসইও নয়।’
তৃতীয়ত, বৈজ্ঞানিক, প্রযুক্তিগত এবং প্রাতিষ্ঠানিক উদ্ভাবনা, প্রযুক্তি হস্তান্তর ও জ্ঞানের বিনিময় জোরদার করা, আধুনিক শিল্পায়নের উন্নয়ন করার কথা বলেন তিনি। একইসঙ্গে বলেন, কার্বন নিঃসরনের মাত্রা কমিয়ে আনার মতো বিষয়গুলোর ওপর গুরুত্ব দিতে হবে। যাতে শক্তিশালী, সবুজ এবং স্বাস্থ্যকর বৈশ্বিক উন্নয়ন অর্জন সম্ভব হয়।’
চতুর্থত, উত্তর এবং দক্ষিণের দেশকে ভেদাভেদ না করে একত্রিতভাবে একটি একক, ভারসাম্যপূর্ণ এবং অন্তর্ভুক্তিমূলক উন্নয়ন অংশীদারিত্ব প্রতিষ্ঠার জন্য এখনই কাজ শুরু করতে হবে। এই প্রক্রিয়ায় কোনো দেশকেই বাদ দেওয়া যাবে না। বৈশ্বিক উন্নয়ন সহযোগিতার জন্য জাতিসংঘকে চালেকের আসনে রাখতে হবে।
চীন সবসময়ই উন্নয়নশীল দেশগুলোর বড় পরিবারের সঙ্গে থাকবে বলে প্রতিশ্রুতি দেন শি জিনপিং। বৈশ্বিক উন্নয়ন সহযোগিতার জন্য প্রয়োজনীয় অর্থ ও সম্পদ বরাদ্দ দেওয়ার অঙ্গীকারও করেন তিনি।