বরাবরই বৃষ্টির পানি বিশুদ্ধ ও পানযোগ্য হিসেবে বিবেচনা করা হলেও নতুন গবেষণায় মিলেছে ভয়ংকর তথ্য। বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন, এখন আর বৃষ্টির পানিও পান করার জন্য নিরাপদ নয়।
ইউরোনিউজের প্রতিবেদন অনুযায়ী, সুইডেনের স্টকহোম বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞানীরা এক গবেষণার পর এ মন্তব্য করেছেন। বিজ্ঞানীরা বলছেন, পৃথিবীর সব প্রান্তে বৃষ্টির পানিতে ক্ষতিকর পিএফএএস রাসায়নিক পাওয়া যাচ্ছে।
খবরে বলা হয়, বর্তমানে বৃষ্টির পানিতে ফরেভার কেমিক্যাল হিসেবে পরিচিত এই রাসায়নিক এমন মাত্রায় পাওয়া যাচ্ছে, যা আর পানের জন্য নিরাপদ নয়।
পিএফএএসকে ‘ফরেভার কেমিক্যাল’ হিসেবে বিবেচনা করা হয়। কারণ, এই রাসায়নিক পদার্থ সহজে নষ্ট হয় না। প্যাকেজিং, শ্যাম্পু, মেকআপে প্রাথমিকভাবে এই রাসায়নিক পাওয়া গিয়েছিল। এসব উপাদান থেকে এই রাসায়নিক পানি ও বাতাসে ছড়িয়েছে।
স্টকহোম বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞানীরা এ নিয়ে বিস্তৃত একটি গবেষণা করেছেন। এরপর এ-সংক্রান্ত একটি গবেষণা প্রকাশ করা হয়েছে আন্তর্জাতিক সাময়িকী এনভায়রনমেন্টাল সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজিতে।
এই গবেষণা দলে ছিলেন স্টকহোম বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ইয়ান কাসিনস। তিনি গবেষণাপত্রটি লিখেছেন। তার ভাষ্যমতে, ‘আমরা যে মাত্রা নির্ধারণ করেছি, সেই অনুসারে পৃথিবীর কোনো অঞ্চলের বৃষ্টির পানি আর নিরাপদ নয়।’
এই গবেষণার জন্য ২০১০ সাল থেকে এ পর্যন্ত নথি সংগ্রহ করেছেন বিজ্ঞানীরা। ইয়ান বলেন, সুপেয় পানির জন্য যুক্তরাষ্ট্রের এনভায়রনমেন্টাল প্রোটেকশন এজেন্সি যে দিকনির্দেশনা দিয়েছে, সে অনুসারে যুক্তরাষ্ট্র কিংবা তিব্বত - কোনো স্থানের বৃষ্টির পানি আর পানযোগ্য নয়।
যুক্তরাষ্ট্রের পানযোগ্য পানির দিকনির্দেশনা অনুসারে পানিতে পিএফএএসের যে মাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে, তার চেয়ে এই দুই অঞ্চলের বৃষ্টির পানিতে পিএফএএসের মাত্রা ১৪ গুণ বেশি। অধ্যাপক ইয়ান কাসিনস বলেন, পিএফএএস এখন অনেক বেশি স্থিতিশীল ও সব জায়গায় ছড়িয়ে পড়েছে।
বিজ্ঞানীরা বলছেন, পিএফএএস এতটাই ক্ষতিকর রাসায়নিক যে এটা শিশুদের রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থায় প্রভাব ফেলে। এতে টিকাও ঠিকঠাক কাজ করে না। এ ছাড়া নারীর গর্ভধারণ ক্ষমতা, শিশু বেড়ে ওঠা ধীর হওয়া, স্থূলতা, কোলেস্টেরল বৃদ্ধি ও বিভিন্ন ক্যানসারের জন্যও দায়ী এই রাসায়নিক।
এই বিষয়গুলো মাথায় রেখে পানযোগ্য পানিতে পিএফএএসের মাত্রা কমিয়ে নতুন মাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। কারণ, পিএফএএস একবার পাকস্থলীতে প্রবেশ করলে সেটি আর শরীর থেকে বের হয় না।