ইতোমধ্যে প্রযুক্তিবিদদের সঙ্গে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম) এর কারিগরি দিক নিয়ে বৈঠক করেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। গত রবিবার (১৯ জুন) ১৩টি রাজনৈতিক দলকে ইভিএম দেখিয়েছে কমিশন। দ্বিতীয় দফায় মঙ্গলবার (২১ জুন) বিএনপিসহ আরো ১৩টি দলটি এই যন্ত্রটি দেখাতে চায় সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানটি। তবে বিএনপিসহ কয়েকটি দল ইসির ডাকে ইভিএম দেখতে যাবে না। সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে এমন তথ্য জানা গেছে।
এই বিষয়ে ইসির যুগ্মসচিব ও পরিচালক (জনসংযোগ) এসএম আসাদুজ্জামান জানান, নির্বাচন কমিশনের নিবন্ধনে থাকা ৩৯ দলের প্রতিনিধি/কারিগরি টিমকে ইভিএম দেখানো হবে। প্রত্যেক দল থেকে সর্বোচ্চ চারজন সদস্য পাঠানোর জন্য সংশ্লিষ্ট রাজনৈতিক দলগুলোর কাছে চিঠি পাঠানো হয়েছে। দ্বিতীয় দফায় মঙ্গলবার ১৩ দলের প্রতিনিধিদের আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে।
বিএনপি চেয়ারপারসনের প্রেস উইংয়ের সদস্য শায়রুল কবীর খান জানান, আমার জানা মতে বিএনপি’র প্রতিনিধি দল ইভিএম দেখতে মঙ্গলবার ইসিতে যাবে না।
এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল-জেএসডি জানিয়েছে, নির্বাচন কমিশনের মতবিনিময় সভায় অংশগ্রহণ করা অর্থহীন ও অপ্রয়োজন মনে করে বিধায় জেএসডি অংশগ্রহণ করবে না।
ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ এর প্রচার সম্পাদক আব্দুল কাইয়ুম জানান, বন্যা দুর্গত মানুষদের নিয়ে সিলেটসহ বিভিন্ন এলাকায় ব্যস্ত সময় পার করছেন। এই কারণে তাদের দলের প্রতিনিধি মঙ্গলবার কমিশনে যাবে না।
বাংলাদেশ মুসলিম লীগ-বিএমএল ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব এডভোকেট শেখ জুলফিকার বুলবুল চৌধুরী বলেছেন, জোটের সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত। কমিশনের বৈঠকে অংশ নেবেন না।
বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টি যাবে কি যাবে না এখনো সিদ্দান্ত নেয়নি বলে জানিয়েছেন দলটির মহাসচিব আব্দুল আউয়াল মামুন।
ইসলামী ঐক্যজোট ইসিতে যাবে বলে জানিয়েছেন দলটির মহাসচিব মুফতী ফয়জুল্লাহ; ইসলামিক ফ্রন্ট বাংলাদেশ ইসিতে যাবে বলে জানিয়েছেন দলের চেয়ারম্যান সৈয়দ বাহাদুর শাহ মোজাদ্দেদী; ন্যাশনাল পিপলস পার্টি-এনপিপি চেয়ারম্যান শেখ ছালাউদ্দিন ছালু জানিয়েছেন ইসিতে যাবেন; ইসিতে যাবেন বলে জানিয়েছেন জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশ-এর মহাসচিব মাওলানা মঞ্জুরুল ইসলাম আফেন্দী। ইসিতে যাবে খেলাফত মজলিস ও বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস।
বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলন ও বাংলাদেশ ইসলামী ফ্রন্ট যাওয়ার বিষয়ে জানা যায়নি।
এরআগে ১৯ জুনের সভায় ড. কামাল হোসেনের গণফোরাম, কাদের সিদ্দিকীর কৃষক শ্রমিক জনতা লীগ ও আন্দালিব রহমান পার্থ’র বাংলাদেশ জাতীয় পার্টি-বিজেপি এর কোনো প্রতিনিধি অংশ নেয়নি।
অংশ নেওয়া ১০ দলের মধ্যে জাতীয় পার্টি ইভিএম ব্যবহার না করার পক্ষে মত দেয়। বাংলাদেশ মুসলিম লীগও একই মতামত দিয়েছে। জাতীয় পার্টি-জেপি’র পক্ষ থেকে বলা হয়েছে ইভিএম দিলে ৩০০ আসনে দিতে হবে, আর না হলে একটিতেও না। জাকের পার্টি’র মতে দেশের মানুষ ভোটকেন্দ্রে যেতে চায় না। তাদের ঘরে বসে ভোট দেওয়ার ব্যবস্থা করার দাবি জানায় দলটি।
২৮ জুন যেসব দলকে ডেকেছে ইসি:
বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ, বাংলাদেশ তরিকত ফেডারেশন, বাংলাদেশের সাম্যবাদী দল-বিএমএল, বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি, লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টি-এলডিপি, গণতন্ত্রী পার্টি, বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টি, বিকল্প ধারা বাংলাদেশ, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল-জাসদ, বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল-বাসদ, বাংলাদেশ ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি-বাংলাদেশ ন্যাপ, বাংলাদেশের বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি ও বাংলাদেশ সাংস্কৃতিক মুক্তিজোট।
আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহার নিয়ে রাজনৈতিক বিতর্কের মধ্যে যন্ত্রটি প্রদর্শন, পরীক্ষা-নিরীক্ষা ও কারিগরি বিষয়ে প্রশ্নোত্তর, মত বিনিময়ের জন্য এই ব্যবস্থা নিচ্ছে কাজী হাবিবুল আউয়াল কমিশন। এর মধ্যে প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞদের সঙ্গেও ইভিএম নিয়ে মত বিনিময় করেছে কমিশন।
এছাড়া অংশীজনের সঙ্গে ইসির চলমান সংলাপে ইভিএম নিয়ে পক্ষ বিপক্ষে মত এসেছে। কমিশনও বলছে, সবার মতামত পর্যালোচনা করেই ইভিএমের বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।