২০২৩ সাল থেকে নতুন কারিকুলামে পঞ্চম শ্রেণির প্রাথমিক সমাপনী পরীক্ষা (পিইসি) এবং অষ্টম শ্রেণির জুনিয়র স্কুল সার্টিফিকেট (জেএসসি) পরীক্ষা থাকবে না বলে জানিয়েছেন শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি।
প্রাক-প্রাথমিক স্তর থেকে উচ্চ মাধ্যমিক স্তর পর্যন্ত নতুন কারিকুলাম অনুমোদন করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এই কারিকুলামে তৃতীয় শ্রেণি পর্যন্ত কোনো শ্রেণি পরীক্ষা থাকবে না।
পঞ্চম এবং অষ্টম শ্রেণিতে সমাপনী পরীক্ষা থাকবে না। দশম শ্রেণির কারিকুলাম অনুযায়ী একটি পাবলিক পরীক্ষা হবে। একাদশ ও দ্বাদশে আলাদা করে দুটি পরীক্ষা শেষে দুই পরীক্ষার ফল নিয়ে চূড়ান্ত ফল তৈরি করা হবে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সামনে সোমবার (১৩ সেপ্টেম্বর) জাতীয় শিক্ষাক্রম রূপরেখা উপস্থাপনের পর সচিবালয়ে সংবাদ সম্মেলনে বিস্তারিত জানান শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি।
এরআগে সকালে সচিবালয়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে থেকে প্রধানমন্ত্রীর কাছে জাতীয় শিক্ষাক্রম রূপরেখা উপস্থাপন করা হয়। প্রধানমন্ত্রী তা অনুমোদন দেন বলে জানিয়েছেন শিক্ষামন্ত্রী।
শিক্ষাক্রম বাস্তবায়নের প্রস্তাবিত পরিকল্পনা
প্রধানমন্ত্রীর সামনে উপস্থাপিত রূপরেখার পরিকল্পনা অনুযায়ী, ২০২১ সালে প্রাথমিক ও মাধ্যমিকে শিক্ষাক্রম উন্নয়ন, শিখন-শেখানো সামগ্রী প্রণয়ন এবং পাইলটিংয়ের জন্য প্রস্তুতি নেবে। ২০২২ সালে নির্বাচিত বিদ্যালয়ে শিক্ষাক্রম ও শিখন-শেখানো সামগ্রী পাইলটিং করা হবে।
২০২৩ সালে প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণিতে এবং ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণিতে নতুন শিক্ষাক্রম প্রবর্তন করা হবে। ২০২৪ সালে তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণি এবং অষ্টম ও নবম শ্রেণিতে চালু হবে নতুন শিক্ষাক্রম। ২০২৫ সালে পঞ্চম শ্রেণি এবং দশম শ্রেণিতে চালু করা হবে নতুন শিক্ষাক্রম। ২০২৬ সালে একাদশ এবং ২০২৭ সালে দ্বাদশ শ্রেণিতে নতুন শিক্ষাক্রম চালু করা হবে।
স্তরভিত্তিক মূল্যায়নে যা থাকছে
রূপরেখা অনুযায়ী, প্রাক-প্রাথমিক থেকে শুরু করে তৃতীয় শ্রেণি পর্যন্ত কোনো পরীক্ষা হবে না। প্রাক-প্রাথমিক এবং প্রথম থেকে তৃতীয় শ্রেণি পর্যন্ত শতভাগ শিখনকালীন মূল্যায়ন করা হবে। অর্থাৎ দৈনন্দিন কার্যক্রমের ওপর মূল্যায়ন করা হবে।
চতুর্থ ও পঞ্চম শ্রেণিতে বাংলা, ইংরেজি, গণিত, বিজ্ঞান ও সামাজিক বিজ্ঞানে ৬০ শতাংশ শিখনকালীন মূল্যায়ন এবং ৪০ শতাংশ সামষ্টিক মূল্যায়ন করা হবে। এছাড়া শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্য এবং সুরক্ষা, ধর্ম শিক্ষা এবং শিল্পকলা বিষয়ে শিখনকালীন শতভাগ মূল্যায়ন করা হবে।
ষষ্ঠ থেকে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত বাংলা, ইংরেজি, গণিত, বিজ্ঞান ও সামাজিক বিজ্ঞানে শিখনকালীন ৬০ শতাংশ এবং সামষ্টিক মূল্যায়ন হবে ৪০ শতাংশ। এছাড়া জীবন ও জীবিকা, ডিজিটাল প্রযুক্তি, শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্য এবং সুরক্ষা, ধর্ম শিক্ষা এবং শিল্প ও সংষ্কৃতি বিষয়ে শিখনকালীন শতভাগ মূল্যায়ন করা হবে।
নবম ও দশম শ্রেণিতে বাংলা, ইংরেজি, গণিত, বিজ্ঞান ও সামাজিক বিজ্ঞানে ৫০ শতাংশ শিখনকালীন মূল্যায়ন এবং বাকি ৫০ শতাংশ সামষ্টিক মূল্যায়ন করা হবে। এছাড়া জীবন ও জীবিকা, ডিজিটাল প্রযুক্তি, শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্য এবং সুরক্ষা, ধর্ম শিক্ষা এবং শিল্প ও সংষ্কৃতি বিষয়ে শতভাগ মূল্যায়ন করা হবে। দশম শ্রেণি শেষে দশম শ্রেণির পাঠ্যসূচির ওপর পাবলিক পরীক্ষা হবে।
একাদশ ও দ্বাদশ শ্রেণিতে আবশ্যিক বিষয়ে শিখনকালীন মূল্যায়ন ৩০ শতাংশ এবং সামষ্টিক মূল্যায়ন ৭০ শতাংশ। নৈর্বাচনিক/বিশেষায়িত বিষয়ে কাঠামো এবং ধারণায়ন অনুযায়ী সামষ্টিক মূল্যায়নের পাশাপাশি প্রকল্পভিত্তিক, ব্যবহারিক ও অন্যান্য উপায়ে শিখনকালীন মূল্যায়নের সুযোগ থাকবে। প্রয়োগিক বিষয়ে শিখনকালীন মূল্যায়ন হবে শতভাগ।
একাদশ ও দ্বাদশ শ্রেণির পাঠ্যসূচির ওপর প্রতি বর্ষ শেষে একটি করে পরীক্ষা হবে। একাদশ ও দ্বাদশ শ্রেণির পরীক্ষার ফলাফলের সমন্বয়ে চূড়ান্ত ফলাফল নির্ধারিত হবে।