নড়াইলের মির্জাপুর ইউনাইটেড ডিগ্রি কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ স্বপন কুমার বিশ্বাসকে লাঞ্ছিতের ঘটনায় সদর থানার ওসি শওকত কবিরকে ক্লোজড করা হয়েছে।
ওসি শওকত কবিরকে খুলনার আর আল এফ রেঞ্জ রিজার্ভ ফোর্সে ক্লোজড করা হয়েছে। শনিবার (২ জুলাই) রাত ১০টার পরে জেলা পুলিশ সুপার কার্যালয় থেকে একটি পত্রে এ তথ্য জানানো হয়। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন সদর থানার ওসি (তদন্ত) ইন্সপেক্টর মাহমুদুর রহমান।
রোববার (৩ জুলাই) সকালে কবির খুলনায় যোগদান করবেন। বর্তমানে সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার দায়িত্ব পালন করবেন সদর থানার ওসি (তদন্ত) ইন্সপেক্টর মাহমুদুর রহমান।
গত ১৮ জুন নড়াইল সদরের মির্জাপুর ইউনাইটেড ডিগ্রি কলেজে কয়েক’শ পুলিশের উপস্থিতিতে অধ্যক্ষ স্বপন কুমার বিশ্বাসকে জুতার মালা পরানো হয়। অধ্যক্ষকে জুতার মালা পরানোর সময় থেকে পুলিশের গাড়িতে ওঠানো পর্যন্ত ঘটনা স্থলে পাহারা দিচ্ছিলেন সদর থানার ওসি।
শিক্ষক লাঞ্ছিতের ঘটনায় জেলা প্রশাসনের গঠিত তদন্ত কমিটি প্রতিবেদন জমা দিয়েছে শনিবার (২ জুলাই) রাতে। তদন্ত কমিটি প্রধান অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট জুবায়ের হোসেন চৌধুরী জেলা প্রশাসকের কাছে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেবার কথা নিশ্চিত করেন। এসময় কমিটির অপর সদস্য জেলা শিক্ষা অফিসার মো. ছায়েদুর রহমান ও সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা শওকত কবীর উপস্থিত ছিলেন।
অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট জুবায়ের হোসেন চৌধুরী কত পৃষ্ঠার তদন্ত প্রতিবেদন এটা না বললেও শিক্ষকের গলায় জুতার মালাসহ সার্বিক বিষয় উল্লেখ করেছেন বলে জানান।
গত ১৮ জুন সদরের মির্জাপুর ইউনাইটেড ডিগ্রি কলেজে অধ্যক্ষ লাঞ্ছিতের ঘটনা ঘটে। এঘটনায় ২৩ জুন জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট জুবায়ের হোসেন চৌধুরীকে প্রধান করে তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠিত হয়। ৩০ জুন প্রতিবেদন দেবার কথা থাকলেও সময় বাড়িয়ে তা শনিবার (২ জুলাই) করা হয়।
অপরদিকে একই ঘটনায় ২৩ জুন পুলিশ সুপারের পক্ষ থেকে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. রিয়াজুল ইসলামকে প্রধান করে তিন সদস্যের কমিটি গঠিত হয়, কমিটির অন্য সদস্য হলেন সদর থানার (ওসি তদন্ত) মাহামুদুর রহমান, বিশেষ শাখার কর্মকর্তা (ডি আই ওয়ান)মীর শরিফুল হক। বৃহস্পতিবার (৩০ জুন) তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেবার কথা থাকলেও পরে সময় বাড়িয়ে শনিবার (২ জুলাই) করা হয়।
নির্ধারিত সময়ে প্রতিবেদন জমা না হওয়া প্রসঙ্গে শনিবার (২ জুলাই) রাত ৯টায় পুলিশ সুপার প্রবীর কুমার রায় জানান, অনেক বড় জিনিস তো তাই প্রতিবেদন তৈরির কাজ চলছে।
উল্লেখ্য, সম্প্রতি নড়াইলের মির্জাপুর ইউনাইটেড ডিগ্রি কলেজের একাদশ শ্রেণির ছাত্র রাহুল দেব রায় নিজের ফেসবুক আইডিতে নূপুর শর্মার ছবি ব্যবহার করে লেখেন- প্রণাম নিও বস ‘নূপুর শর্মা’ জয় শ্রীরাম। এ পোস্ট দেয়ার পর গত ১৮ জুন সকালে কলেজে আসেন রাহুল। এরপর তার বন্ধুরা পোস্টটি মুছে ফেলতে বললেও পোস্ট ডিলিট করেনি রাহুল।
শিক্ষার্থীরা বিষয়টি কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ স্বপন কুমার বিশ্বাসকে জানান। একপর্যায়ে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ কলেজের সব শিক্ষকদের পরামর্শে রাহুলকে পুলিশের হাতে তুলে দেয়ার চেষ্টা করেন। এরইমধ্যে শিক্ষার্থীসহ স্থানীয়রা বিক্ষুব্ধ হয়ে ওঠেন। একপর্যায়ে কলেজ চত্বরে থাকা শিক্ষকদের তিনটি মোটরসাইকেল পুড়িয়ে দেয় বিক্ষুব্ধ জনতা। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশ লাঠিচার্জসহ কয়েক রাউন্ড টিয়ারশেল ছোঁড়ে। ঘটনার সময় দুই পুলিশ সদস্যসহ অন্তত ১০ জন আহত হন।
এসময় জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপার ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে দোষীদের আইনের আওতায় আনার আশ্বাস দিলে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়। একপর্যায়ে পুলিশ ও কর্মকর্তাদের সামনে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ ও অভিযুক্ত শিক্ষার্থীর গলায় জুতার মালা পরিয়ে কলেজ থেকে বের করা হয়।