সরকারের পক্ষ থেকে ড. মুহাম্মদ ইউনূসের বিরুদ্ধে করা অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে ইউনূস সেন্টার থেকে যে বিবৃতি এসেছে তা ‘শাক দিয়ে মাছ ঢাকার অপচেষ্টা’ বলে মন্তব্য করেছেন তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী এবং আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ।
বৃহস্পতিবার (৩০ জুন) সচিবালয়ে সমসাময়িক বিষয়ে সাংবাদিকদের সাথে মতবিনিময়কালে তিনি এ মন্তব্য করেন।
তথ্যমন্ত্রী বলেন, ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে গ্রামীণ ব্যাংকের নামেই গ্রামীণফোনের লাইসেন্স দেওয়া হয়েছিলো। কিন্তু গ্রামীণফোনের অর্থ কখনও গ্রামীণ ব্যাংকে যায়নি। নোবেল প্রাইজের অর্থ গ্রামীণ ব্যাংকে রাখার কথা থাকলেও সেটি ড. মুহাম্মদ ইউনূস তার ব্যক্তিগত অ্যাকাউন্টে রেখেছেন এবং এ টাকা কোনো জনহিতকর কাজে ব্যয় করেননি।
মন্ত্রী বলেন, ড. মুহাম্মদ ইউনূস যে বিবৃতি দিয়েছেন, এটি সত্যের অপলাপ। তিনি শাক দিয়ে মাছ ঢাকার অপচেষ্টা চালাচ্ছেন। তিনি যে বিরোধিতা করেছেন, সেটি দিবালোকের মতো স্পষ্ট এবং তিনি আগে কখনও এ কথা বলেননি যে, আমি এই অপচেষ্টা চালাইনি। বরং যখন বিশ্ব ব্যাংকের অর্থায়ন বন্ধ হলো, তখন দম্ভ করে বিভিন্ন জায়গায় নানা কথা তিনি বলেছিলেন। সে কথাগুলো এখনও, বাতাসে ভেসে বেড়ায়।
তিনি বলেন, পদ্মা সেতুতে বিশ্ব ব্যাংকের অর্থায়নের বিরোধিতা করেছিলেন অনেকেই। তার মধ্যে অন্যতম প্রধান ব্যক্তি হচ্ছেন...তার প্রতি যথাযথ সম্মান-শ্রদ্ধা রেখেই বলতে চাই...পদ্মা সেতুর বিরোধিতাকারী...বিশেষ করে বিশ্ব ব্যাংকের অর্থায়নের বিরোধিতাকারী... অর্থায়ন বন্ধের ক্ষেত্রে যারা কুশিলব হিসেবে কাজ করেছিলেন... তার মধ্যে অন্যতম প্রধান ব্যক্তি হচ্ছেন ড. মুহাম্মদ ইউনূস।
মন্ত্রী বলেন, তার সাথে হিলারি ক্লিনটনের বিশেষ সখ্যতা থাকার সুবাদে হিলারি ক্লিনটনের মাধ্যমে পদ্মা সেতুতে বিশ্ব ব্যাংকের অর্থায়ন বন্ধের যে চেষ্টা চালিয়েছেন, বন্ধ করার ক্ষেত্রে মূল কুশিলবের ভূমিকা পালন করেছিলেন, সেটি দিবালোকের মতো স্পষ্ট, সেটি দেশ-বিদেশের সবাই জানে।
পদ্মা সেতু হওয়ায় প্রধানমন্ত্রী এবং সরকারকে অভিনন্দন জানিয়েছেন ড. মুহাম্মদ ইউনূস। এই বিষয়ে একজন সাংবাদিক ড. হাছান মাহমুদের দৃষ্টি আকর্ষণ করলে তিনি বলেন, লজ্জা ঢাকার অপচেষ্টায় এই অভিনন্দন।
পদ্মা সেতু নির্মিত হওয়ায় অনেক বিরোধিতাকারীর সুর পাল্টেছে মন্তব্য করে মন্ত্রী বলেন, বিএনপিও কিছুটা সুর পাল্টানোর চেষ্টা করছে। যদিও মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সাহেব এখনও কিছু বলেননি।
প্রসংগত, পদ্মা সেতুর অর্থায়ন বন্ধ করাসহ সেতু বাস্তবায়নের পথে ষড়যন্ত্রকারী হিসেবে গ্রামীণ ব্যাংকের প্রতিষ্ঠাতা ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে দায়ী করে বিভিন্ন সময়ে বক্তব্য দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সেতুর উদ্বোধন ঘিরে প্রসঙ্গটি আরও বেশি আলোচিত হয়।
তবে এতোদিন অনেকটা মুখ বুজে থাকলেও বুধবার (২৯ জুন) রাতে এই বিষয়ে নিজের মতামত লিখিত আকারে তুলে ধরেন শান্তিতে নোবেল বিজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূস। ইউনূস সেন্টার থেকে পাঠানো জবাবের শিরোনাম দেওয়া হয়েছে: ‘মাননীয় প্রধানমন্ত্রী কর্তৃক প্রফেসর ইউনূসের বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগসমূহের জবাব’।
ইউনূস সেন্টারের বিবৃতিতে পদ্মা সেতুর বিরোধিতা কিংবা ষড়যন্ত্রকারী হিসেবে অস্বীকার করে ড. ইউনূস নিজেকে পদ্মা সেতুর স্বপ্নে বিশ্বাসী হিসেবে উল্লেখ করেন। পাশাপাশি এ ঐতিহাসিক সাফল্যের জন্য প্রধানমন্ত্রীকে অভিনন্দনও জানান। তবে লিখিত বক্তব্যে সব অভিযোগের উত্তর মেলেনি বলে সমালোচনা করছেন অনেকেই।
পদ্মা সেতুর অর্থায়ন বন্ধসহ, সেতু বাস্তবায়নের পথে ষড়যন্ত্রকারী হিসেবে ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নাম বেশ পুরোনো। বিষয়টি আরও আলোচিত হয় নানা চড়াই-উতরাই পেরিয়ে সেতু উদ্বোধন হওয়ায়। তবে বিষয়টি নিয়ে এবার লিখিত আকারে নিজের অবস্থান জানান দিয়েছেন তিনি।
বিবৃতিতে ড. ইউনূস দাবি করেন, চাকরি ধরে রাখতে নয়, গ্রামীণ ব্যাংকের মৌলিক আইনি মর্যাদা রক্ষায় তিনি হাইকোর্টে রিট করেছিলেন। যদিও ৬০ বছর বয়স পার হলেও গ্রামীণ ব্যাংকের এমডির পদ থেকে পদত্যাগ না করে পাল্টা পদ টিকিয়ে রাখতে মামলা করেছিলেন তিনি।
নিজের আয়ের উৎস হিসেবে ভাষণের উচ্চ ফি, ২৫ ভাষায় প্রকাশিত বইয়ের রয়্যালটি এবং এসব অর্থ স্থায়ী আমানত হিসেবে রেখে অর্জিত আয়কে উল্লেখ করেন ড. ইউনূস। তিনি গ্রামীণ ব্যাংকের এমডি হিসেবে বেতনের বাইরে কোনো অর্থ গ্রহণ করেননি বলেও দাবি করেন।
পাশাপাশি তিনি কখনোই গ্রামীণফোনের শেয়ারের মালিক ছিলেন না বলেও জানান। যদিও তার বক্তব্যে ওঠে আসেনি গ্রামীণফোনের প্রতিষ্ঠাতা ইকবাল জেড কাদীরের নাম।
অধ্যাপক ইউনূস কখনোই ক্লিনটন ফাউন্ডেশনকে কোনো অনুদান দেননি বলেও বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয়। এমন অভিযোগকে সম্পূর্ণ কল্পনাপ্রসূত এবং মানহানিকর আখ্যা দিয়ে জানান, সরকার আগেই তার সব ধরনের লেনদেনের তথ্য সংগ্রহ করেছে।