# ১৯ আগস্ট থেকে সড়কে শতভাগ বাস চলবে # সরকারের নির্দেশনা মানা হচ্ছে না গণপরিবহণে # করোনা পরিস্থিতির অবনতি হলে আবারও বিধিনিষেধ
মহামারি করোনা ভাইরাসের প্রকোপ কিছুটা কমলেও পুরো আগস্ট মাস জুড়েই রয়েছে শঙ্কা। এ পরিস্থিতিতেই গণপরিবহনসহ চলছে সব ধরনের পরিবহন, খুলেছে হোটেল, দোকানপাট ও শপিংমল। তবে স্বাস্থ্যবিধি মেনে শর্তসাপেক্ষে গত ১১ আগস্ট থেকে খুলে দেয়া হয়েছে সব কিছু। কিন্তু গণপরিবহন থেকে শুরু করে দোকানপাট ও শপিংমলের কোথাও নেই স্বাস্থ্যবিধির বালাই। মুখে-মুখে আর বিভিন্ন মার্কেটের দোকানে-দোকানে স্বাস্থ্যবিধি মানার সাইনবোর্ড ঝুলতে দেখা গেলেও এখন অনেকেই মাস্ক পরছেন না। এমন কি গণপরিবহনগুলোতেও মাস্ক ছাড়াই যাত্রী উঠানামা বা স্যানেটাইজেশন ব্যবস্থা চালু করতে দেখা যায়নি। এভাবে চলতে থাকলে সংক্রমণ পরিস্থিতি আরও জটিল হওয়ার শঙ্কা প্রকাশ করেছেন স্বাস্থ্য বিশেজ্ঞরা।
এদিকে আগামী ১৯ আগস্ট থেকে পুরোদমে চলবে গণপরিবহন। যদিও আগে থেকেই ট্রেন ও লঞ্চ শতভাগ যাত্রী নিয়ে চলাচল শুরু করেছে। ১৯ আগস্ট থেকে বাসও শতভাগ যাত্রী নিয়ে চলাচল করতে পারবে।
১৯ আগস্ট থেকে বিনোদনকেন্দ্র ও গণপরিবহন পুরোপুরি খুলে দিয়ে বৃহস্পতিবার মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে এ বিষয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়েছে। প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, আসন সংখ্যার অর্ধেক ব্যবহার করে পর্যটন, কমিউনিটি সেন্টার ও বিনোদনকেন্দ্রগুলোও খুলতে পারবে।
গত ৩ আগস্ট অনুষ্ঠিত কোভিড-১৯ সংক্রমণ পরিস্থিতি পর্যালোচনা সংক্রান্ত আন্তঃমন্ত্রণালয় সভার সিদ্ধান্ত, দেশের আর্থসামাজিক অবস্থা, অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড সচল রাখা এবং সামগ্রিক পরিস্থিতি বিবেচনায় চলমান বিধিনিষেধের ধারাবাহিকতায় নতুন করে চারটি শর্ত দিয়ে ১৯ আগস্ট থেকে পরবর্তী নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত নতুন করে বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়েছে বলে প্রজ্ঞাপনে উল্লেথ করা হয়েছে। এই চারটি শর্তের মাধ্যমে মূলত চলাচল ও কার্যক্রমে আরও শিথিলতা আসল।
শর্তগুলো হলো : যথাযথভাবে স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ করে সড়ক, রেল ও নৌপথে সকল প্রকার গণপরিবহন চলাচল করতে পারবে। পর্যটনকেন্দ্র, রিসোর্ট, কমিউনিটি সেন্টার ও বিনোদনকেন্দ্র আসন সংখ্যার শতকরা ৫০ ভাগ ব্যবহার করে চালু করতে পারবে। সকলক্ষেত্রে মাস্ক পরিধান নিশ্চিত করতে হবে এবং স্বাস্থ্য অধিদফতর প্রণীত স্বাস্থ্যবিধি যথাযথভাবে অনুসরণ করতে হবে। যেকোনো প্রতিষ্ঠানে স্বাস্থ্যবিধি প্রতিপালনে অবহেলা পরিলক্ষিত হলে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ দায়িত্ব বহন করবে এবং তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
বিধিনিষেধ শেষে বুধবার (১১ আগস্ট) থেকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে মোটামুটি সবকিছু খুলে দিয়েছে সরকার। বুধবার থেকেই ৩৮ জোড়া আন্তঃনগর ও ১৯ জোড়া মেইল-কমিউটার ট্রেন দিয়ে সীমিত আকারে স্বাস্থ্যবিধি মেনে ট্রেন চলাচল শুরু করেছে। এদিন থেকে বাড়তি ভাড়া প্রত্যাহার করে শতভাগ আসনে যাত্রী নিয়ে চলছে লঞ্চ। একইসঙ্গে বুধবার থেকে খুলেছে দোকান-শপিংমল এবং খাবারের দোকান, অর্ধেক আসন খালি রেখে খুলেছে হোটেল-রেস্তোরাঁ। সরকারি-বেসরকারি অফিস, ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানও স্বাস্থ্যবিধি মেনে খোলা রয়েছে।
তবে বিধিনিষেধের ধারাবাহিকতায় পর্যটনকেন্দ্র, রিসোর্ট, কমিউনিটি সেন্টার ও বিনোদনকেন্দ্র বন্ধই রাখা হয়। জনসমাবেশ হয় এ ধরনের সামাজিক (বিবাহোত্তর অনুষ্ঠান (ওয়ালিমা), জন্মদিন, পিকনিক, পার্টি ইত্যাদি) রাজনৈতিক ও ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠানও বন্ধ রয়েছে।
করোনাভাইরাসের ভয়াবহ সংক্রমণরোধে গত ২৩ জুলাই সকাল ৬টা থেকে ১৪ দিনের কঠোর বিধিনিষেধ জারি করে সরকার। তখন ২৩টি শর্ত দেয়া হয়। সেই বিধিনিষেধের মেয়াদ গত ৫ আগস্ট রাত ১২টায় শেষ হয়। পরে কিছুটা শিথিলতা এনে বিধিনিষেধের মেয়াদ গত ১০ আগস্ট (মঙ্গলবার) পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছিল।
এদিকে মানুষের জীবন জীবিকার জন্য গত ১১ আগস্ট থেকে লকডাউন শিথিল করে সরকার। প্রজ্ঞাপনে নতুন কিছু বিধিনিষেধ যুক্ত করা হয়। লকডাউন শিথিলের দ্বিতীয় দিনে রাজধানীর সড়কগুলোতে চলছে গণপরিবহণ। পুরনো ভাড়ায় সব আসনে যাত্রী বহন করার নির্দেশনা দিলেও পরিবহণগুলোতে জীবাণুনাশক প্রয়োগ, মাস্ক পরিধান বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। কিন্তু এসব কিছু মানা হচ্ছে না গণপরিবহণগুলোতে।
নির্দেশনায় বলা হয়েছে, মোট বাসের অর্ধেক চলাচল করবে। এ ছাড়া বাসে যত সংখ্যক আসন রয়েছে, ঠিক তত সংখ্যক যাত্রী তোলা যাবে। অর্থাৎ দাঁড়িয়ে যাত্রী পরিবহণ করা যাবে না। তবে এসবের কিছুই মানা হচ্ছে না রাজধানীর পরিবহণগুলোতে। বৃহস্পতিবার মিরপুরের কালশী মোড়ে কথা হয় একটি বাস কোম্পানির কাউন্টারে দায়িত্বে থাকা সুপারভাইজারের সঙ্গে। তিনি জানান, প্রয়োজনের তুলনায় বাস কম হওয়ায় যাত্রীর চাপ বেশি। ফলে কোনো কোনো অবিল এলাকা থেকে দুএকজন জোর করে বাসে উঠে যাচ্ছেন। ফলে কিছু কিছু এলাকায় দু’চারজন যাত্রী দাঁড়িয়ে যান।
একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কর্মরত এস এম শাহাজাহা জানান, আজ সকালে তিনি খিলগাঁও থেকে বাহন পরিবহণের একটি বাসে দৈনিক বাংলায় গিয়েছেন। তবে বাসে এত ভিড় ছিলে যে দরজায় ঝুলে যেতে হয়েছে। তিনি বলেন, এতে কোনো রকম স্বাস্থ্যবিধিই মানা হচ্ছে না। যেখানে বাসের ভেতরে ঢুকতেই পারিনি সেখানে হ্যান্ডস্যানিটাইজারের কোনো প্রশ্নই আসে না।
এদিকে মিরপুর-১২ থেকে কুড়িলে আসা অপর এক যাত্রী জানান, আল-মক্কায় তিনি এসেছেন। বাসে দাঁড়িয়ে যাত্রী পরিবহণ করা হয়েছে। তবে হ্যান্ড স্যানিটাইজারের কোনো ব্যবস্থাই ছিল না।
বাংলাদেশ সড়ক পরিবহণ মালিক সমিতি মহাসচিব এবং ঢাকা সড়ক পরিবহণ মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক খন্দকার এনায়েত উল্যাহ একটি গণমাধ্যমকে বলেন, রাজধানীতে এক কোম্পানির মোট পরিবহণের অর্ধেক পরিবহণই চলাচল করছে। যারা বলেছে অর্ধেক বেশি বা সব পরিবহণ চলাচল করছে তারা ভুল বলেছে। আর মেট্রোতে সরকারি নির্দেশনা সম্পূর্ণভাবে মানা সম্ভব না কোনভাবেই। মোড়ে মোড়ে স্টপেজ তাই সব স্টপেজে জীবাণুনাশক স্প্রে করা সম্ভব না। এতে যাত্রা পথে অনেক সময় নষ্ট হবে।
অপরদিকে করোনা পরিস্থিতির অবনতি হলে আবারও বিধিনিষেধ আরোপ করা হবে বলে জানিয়েছেন জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন। আজ দুপুরে সচিবালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি এ কথা জানান।
প্রতিমন্ত্রী বলেন, জীবন-জীবিকার তাগিদে বিধিনিষেধ শিথিল করা হয়েছে। তবে করোনা পরিস্থিতির অবনতি ঘটলে আবারও বিধিনিষেধ দেয়া হবে। ফরহাদ হোসেন বলেন, দুটি কৌশলই আমরা অবলম্বন করব। একটা হলো বিধিনিষেধ বা লকডাউন, আরেকটি হচ্ছে ছেড়ে দেয়া। কিন্তু সবাইকে মাস্ক পরতে হবে। তাহলে পরিস্থিতি খারাপ হলে আবার লকডাউন দেবেন কি না- এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, হ্যাঁ, পৃথিবীর যে কোনো দেশে সংক্রমণ বাড়লেই, যেমন অস্ট্রেলিয়াতে সেনাবাহিনী নামানো হয়েছে, কারফিউ দেয়া হয়েছে, সেখানে লকডাউন দেয়া হয়েছে। আমেরিকাতেও দেয়া হয়েছে। দেয়া হচ্ছে কেন? কারণ এর কোনো বিকল্প নেই।
তিনি বলেন, আমরা দীর্ঘদিন ধরে বিধিনিষেধের মধ্য দিয়ে যাছিলাম। এক্ষেত্রে বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ বিভিন্নভাবে তাদের অপরিহার্যতা... এটা খোলা প্রয়োজন, ওটা খোলা প্রয়োজন, কারণ হচ্ছে ব্যবসা করে, কাজ করে, তাদের দিকে তাকিয়ে কিন্তু এ বিষয়গুলো শিথিল করা প্রয়োজন। যদিও পরিস্থিতি কিন্তু এখনো সন্তোষজনক নয়। সেটা (সংক্রমণ) ৫ ভাগের নিচে আনতে হবে।
তিনি বলেন, আমাদের অবশ্যই মনে রাখতে হবে, আমি অসতর্ক হলে আক্রান্ত হব। আর আক্রান্ত হলে আমার যদি শারীরিক কোন সমস্যা থাকে, আমার মৃত্যুর ঝুঁকি আছে, সবার বিষয়টি উপলব্ধি করতে হবে।