ভারতীয় ক্রিকেট দলের সাবেক অধিনায়ক বিরাট কোহলির সময়টা বেশ কিছু দিন যাবতই ভাল যাচ্ছেনা। সমালোচনার তীড়ে বিদ্ধ হচ্ছেন তিনি। তবে ভারতীয় দলের সাবেক কোচ রবি শাস্ত্রীর মতে সমালোচকদের মুখ বন্ধ করতে কোহলির দরকার মাত্র একটি হাফ সেঞ্চুরি। সংযুক্ত আরব আমিরাতে শুরু হতে যাওয়া এশিয়া কাপে পাকিস্তানের বিপক্ষে ম্যাচ দিয়ে মিশন শুরু করবে বর্তমান চ্যাম্পিয়ন ভারত। পাকিস্তানের বিপক্ষে ম্যাচ নিয়ে যতটা উত্তেজনা, ঠিক ততটাই আগ্রহের কেন্দ্রবিন্দুতে ভারতের সেরা ব্যাটার বিরাট কোহলি। কারন ফর্মহীনতায় ভুগছেন কোহলি। রবি শাস্ত্রীর মতে প্রথম ম্যাচে পাকিস্তানের বিপক্ষে হাফ-সেঞ্চুরি করলেই সমালোচকদের মুখ বন্ধ হয়ে যাবে।
২০১৯ সালের ডিসেম্বরে সর্বশেষ আন্তর্জাতিক সেঞ্চুরি করেছেন কোহলি। এমনকি ম্যাচ জেতানো কোন বড় ইনিংসও নেই। ফর্মে ফিরতে, বেশ কিছুদিন বিশ্রামে থাকা কোহলি এশিয়া কাপ দিয়ে আবারও ক্রিকেটে ফিরছেন তিনি।
অস্ট্রেলিয়ায় অনুষ্ঠেয় বিশ^কাপের বিষয়টি মাথায় রেখে এবারের এশিয়া কাপ হচ্ছে টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটে। তাই পাকিস্তানের বিপক্ষে ভারতের প্রথম ম্যাচেই অনন্য এক মাইলফলকের সামনে দাঁড়িয়ে কোহলি। বিশে^র ১৪তম ও ভারতের দ্বিতীয় ক্রিকেটার হিসেবে টি-টোয়েন্টিতে শততম ম্যাচ খেলতে নামবেন তিনি।
তবে শততম ম্যাচ নয়, কোহলির ব্যাটে বড় স্কোরের প্রত্যাশায় ভক্তরা। শাস্ত্রী জানান, পাকিস্তানের বিপক্ষে ম্যাচে হাফ-সেঞ্চুরি করলেই সমালোচকদের মুখ বন্ধ হয়ে যাবে।
আসন্ন এশিয়া কাপের অফিসিয়াল সম্প্রচারকারী স্টার স্পোর্টস আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে শাস্ত্রী বলেন, ‘আমি তার সাথে কথা বলিনি, কিন্তু এটা রকেট সায়েন্স নয়। বড় ক্রিকেটাররা সময়মত জ¦লে উঠে। তাদের বিরতি দরকার, মানসিক অবসাদ কাটিয়ে বিশ্বের সেরা হয়ে উঠে। বিশ্ব ক্রিকেটে এমন কোন খেলোয়াড় নেই, যার খারাপ সময় যায়নি এবং আমি নিশ্চিত, এই ডাউনটাইমটি শুধুমাত্র শরীরের জন্য নয়, এটি সময়ের মধ্যেও হয়ে থাকে।’
তিনি আরও বলেন, ‘কোন জিনিসটা ভুল করেছে কোহলি? যে ঠিক কাজগুলো করেছে, সেগুলোর দিকেই নজর দেওয়া উচিত। খারাপ জিনিসগুলো মাথায় নিয়ে আসার কোনও প্রয়োজন নেই। খেলার মধ্যে এগুলো হতেই পারে। যা ভাবার, পরিকল্পনা করার, তা হয়ে গেছে। এবার সময় মাঠে নেমে সেগুলো কার্যকর করা।’
ইংল্যান্ড সফরের পর ওয়েস্ট ইন্ডিজ এবং জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে সিরিজে বিশ্রামে ছিলেন কোহলি। ছুটি কাটানোর পর মুম্বাইয়ে অনুশীলনও করেন তিনি। কোহলির এই বিশ্রামে অনেক বেশি নির্ভার শাস্ত্রী। তার মতে, অনেক ঠান্ডা মাথা নিয়ে দলে ফিরবে কোহলি।
কোহলি অধিনায়ক থাকাকালীন কোচ থাকা শাস্ত্রী বলেন, ‘অনেক দিন খেলার বাইরে ছিল সে। রান করতেই হবে বলে, যে চাপটা ছিল সেটাও কেটে গিয়েছে। ঠান্ডা মাথা নিয়ে ফিরবে কোহলি। এবার যা করবে সেটাই আগামী দিনগুলো ঠিক করে দিবে। প্রথম ম্যাচে একটা হাফ-সেঞ্চুরি করুক। সমালোচকদের মুখ বন্ধ হয়ে যাবে। যা গেছে সেটা নিয়ে ভাবার কোনও মানে নেই। মানুষ খুব সহজে ভুলে যায়।’
ভারত-পাকিস্তান ম্যাচও নিয়ে কথা বলেছেন শাস্ত্রী। তিনি জানান, ‘ভারত-পাকিস্তান লড়াই মানেই একটা অন্য ম্যাচ। ক্রিকেটারদের কাছেও তাই। তবে চাপটা কিন্তু আসে বাইরে থেকে। যেখানেই যাবেন, ভারত-পাক ম্যাচ নিয়ে কথা চলবে। তাই বাইরে কি হচ্ছে, না হচ্ছে ভুলে গিয়ে নিজের খেলাটার উপরে জোর দিতে হবে। পাকিস্তান বলে চাপ নিলে চলবে না। এখন গণমাধ্যমের ব্যাপারও আছে। তাই ম্যাচের দু’দিন আগে এবং এক দিন পরে গণমাধ্যম থেকে দূরে থাকতে হবে।’
ইনজুরিতে এশিয়া কাপে খেলবেন না পাকিস্তানের শাহিন শাহ আফ্রিদি। তার অনুপুস্থিতি ভারতকে সুবিধা দেবে, সরাসরি না বললেও ইঙ্গিত দিয়েছেন শাস্ত্রী। তিনি বলেন, ‘ভারত তাদের বিপক্ষে যেসব ম্যাচ হেরেছে, তার অনেকগুলোর পেছনেই কিন্তু বিপক্ষের বাঁ-হাতি পেসারদের অবদান আছে। চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি ফাইনালের মোহাম্মদ আমির, টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে আফ্রিদি। আবার কখনও বা ট্রেন্ট বোল্টও দাপট দেখিয়েছে। বাঁ-হাতি পেসাররা দু’তিন ওভারে খেলার মোড় ঘুরিয়ে দিতে পারে। ১৯৯২ বিশ্বকাপ ফাইনালে ওয়াসিম আকরাম করেছিলো। ২০১৫ বিশ্বকাপে অস্ট্রেলিয়ার মিচেল স্টার্ক প্রথম ওভারেই ব্রেন্ডন ম্যাককালামকে বোল্ড করেন, শুরুতেই নিউজিল্যান্ডকে চাপে ফেলে দেন। বাঁ-হাতি থাকা মানেই বোলিং আক্রমণে বৈচিত্র্য আসে।’
এশিয়া কাপ কে জিতবে এমন প্রশ্নে, কোন দলকেই ফেভারিট বলেননি শাস্ত্রী। তিনি বলেন, ‘এবার দারুণ একটা প্রতিযোগিতা হতে চলেছে। আমরা ভারত-পাকিস্তানের কথা বলছি ঠিকই, কিন্তু মনে রাখতে হবে, এশিয়ার ক্রিকেট এখন খুবই শক্তিশালী। শ্রীলংকা, বাংলাদেশ বা আফগানিস্তানকে হাল্কাভাবে নেয়ার সুযোগ নেই। একটা টস হারা কিন্তু খুবই গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠতে পারে। ফেভারিট অবশ্যই ভারত-পাকিস্তান। কিন্তু এই ফরম্যাটে যে কোনও দল, যে কাউকে হারানোর ক্ষমতা রাখে।’