# প্রাথমিকে বদলির পর সার্ভিস কাউন্ট চান শিক্ষকরা # স্কুল খোলার অপেক্ষা করা যায় না: ইউনিসেফ-ইউনেস্কো
মহামারি করোনা পরিস্থিতির কারণে দীর্ঘদিন বন্ধ রয়েছে দেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। ফলে সংকটে পড়েছে শিক্ষা ব্যবস্থা। অনিশ্চিয়তা দেখা দিয়েছে ছেলে-মেয়েদের ভবিষ্যৎ শিক্ষা জীবনে।
সংকট উত্তরণে সরকার চলতি বছরের আটকে থাকা এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষার ভবিষ্যৎ নির্ধারণ করেছে। সংক্ষিপ্ত আকারে পরীক্ষা নাকি অটোপাস দেয়া হবে সে সিদ্ধান্ত চলতি সপ্তাহে সংবাদ সম্মেলন করে শিক্ষামন্ত্রী জানিয়ে দেবেন বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে।
শিক্ষা মন্ত্রণালয় সূত্র জানিয়েছে, ২০২১ সালের ঝুলে থাকা এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষা নেয়া সম্ভব না হলে বিকল্প পদ্ধতিতে পাস করানোর চিন্তাভাবনা করছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। এজন্য একাধিক প্রস্তাব তৈরি করে প্রধানমন্ত্রীর কাছে পাঠানো হয়েছে।
প্রস্তাবে বলা হয়েছে, রচনামূলক বা সৃজনশীল প্রশ্ন বাদ দিয়ে কেবল বহুনির্বাচনী প্রশ্নে (এমসিকিউ) পরীক্ষা নেয়া। বিষয় ও পূর্ণমান (পরীক্ষার মোট নম্বর) কমিয়ে পরীক্ষা নেয়া। এক্ষেত্রে প্রতি বিষয়ের দুই পত্র একীভূত করা।
পাশাপাশি ২০০ নম্বরের বদলে ১০০ নম্বরে পরীক্ষা নেয়া হবে। কিন্তু উভয়ক্ষেত্রেই করোনা পরিস্থিতির উন্নতি জরুরি। অর্থাৎ সংক্রমণ ১০ শতাংশের নিচে নেমে এলে স্বাস্থ্যবিধি নিশ্চিত করে পরীক্ষা নেয়া হবে। স্বাস্থ্যবিধি নিশ্চিতে কেন্দ্রের সংখ্যা বর্তমানের তুলনায় দ্বিগুণ করে এই পরীক্ষা নেয়া হবে।
এমনটি সম্ভব না হলে এসএসসির ক্ষেত্রে জুনিয়র স্কুল সার্টিফিকেট (জেএসসি) পরীক্ষার ফলের ৫০ শতাংশ এবং অ্যাসাইনমেন্ট ও ক্লাস অ্যাকটিভিটিসের ওপর ৫০ শতাংশ ফলাফল নিয়ে ফল প্রস্তুত করা হতে পারে। এইচএসসির ক্ষেত্রে শিক্ষার্থীর এসএসসির ফলের ৫০ শতাংশ, জেএসসির ২৫ শতাংশ এবং অ্যাসাইনমেন্টের ফলের ২৫ শতাংশ সমন্বয় করে ফল প্রকাশের জন্য প্রস্তাব করা হয়েছে।
সে বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী একটি প্রস্তাবে অনুমোদন দিয়েছেন। সেটি শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনির কাছে পাঠানো হয়েছে। সে বিষয়টি তুলে ধরতে চলতি সপ্তাহে সংবাদ সম্মেলন করে তা জানিয়ে দেয়া হবে। এর ভিত্তিতে শিক্ষা বোর্ডগুলো ফলাফল প্রকাশের কাজ শুরু করবে বলে জানা গেছে।
,,,,,,,,,
এদিকে প্রাথমিকে বদলির পর শিক্ষকদের জ্যেষ্ঠতার তালিকায় তার নাম আর উঠছে না। কারণ, তার আগের কর্মস্থলের ১১ বছরের শিক্ষকতার অভিজ্ঞতা আর কাজে আসছে না। ফলে প্রাথমিকে বদলি নিয়ে সংকট তৈরি হয়েছে।
কিশোরগঞ্জের ভৈরবে প্রাথমিক স্কুলে ১১ বছর শিক্ষকতা করেছেন নাঈমা জান্নাত। ২০১৮ সালে স্বামীর কর্মস্থল ঢাকার একটি স্কুল বদলি হয়ে আসেন তিনি। নতুন কর্মস্থলে বদলি হয়ে আসার পর শিক্ষকদেও আগের অভিজ্ঞতা যুক্ত করা হচ্ছে না বলে অভিযোগ করেন তিনি।
জান্নাত ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, বদলি হয়ে এসে কি আমি অপরাধ করেছি? শুধু আমি নয়, সারা দেশে হাজার হাজার সহকারি শিক্ষক রয়েছেন, যারা নিজ উপজেলা থেকে অন্য উপজেলা, জেলা ও মহানগরে বদলি হওয়ার পর জ্যেষ্ঠতা পাচ্ছেন না। বদলি হওয়ার কারণে তার অতীতের সব অভিজ্ঞতা শূন্য হয়ে গেছে। অর্থাৎ বদলি হওয়া নতুন জায়গায় তিনি শূন্য থেকে চাকরি শুরু করছেন। সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পদোন্নতির ক্ষেত্রে বদলির পরের অভিজ্ঞতাকে কাউন্ট করা হয় না।এটা খুবই হতাশাজনক।
এ সমস্যায় পড়তে হয়েছে এমন অন্যান্য শিক্ষকরা বলছেন, এটা কোনো নিয়ম হতে পারে না। কোনো সরকারি চাকরিতে এমন নিয়ম নেই। প্রাথমিকে কেন এ আজব পদ্ধতি অনুসরণ করা হচ্ছে। প্রাথমিকের কোনো একজন সহকারী শিক্ষক দীর্ঘদিন কোনো স্কুলে চাকরি করে অন্য স্কুলে যোগদান করলে তার অতীতের সকল অভিজ্ঞতা বাতিল! নতুন স্কুলে যোগদানের তারিখ থেকে তার জ্যেষ্ঠতার হিসাব শুরু হয়।
প্রাথমিক স্কুলে শিক্ষকতা অবদলিযোগ্য চাকরি। তারপরও যারা বদলি হন, অতীতের অভিজ্ঞতা গণ্য হবে না- এমন শর্ত মেনেই তারা বদলি হন।
প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা বলছেন, প্রাথমিক স্কুলের শিক্ষকদের নিয়োগ দেয়া হয় স্থানীয়ভাবে। যেটা অন্য কোনো চাকরিতে নেই। নিয়োগে স্পষ্ট লেখা থাকে তিনি নিজ উপজেলার মধ্যে সারাজীবন চাকরি করবেন। তারপরও অনেকে বদলি হয়ে অন্যত্র চলে যান। সেই বদলি নীতিমালায় বলা থাকে, তিনি বদলি হলে আগের অভিজ্ঞতা আর গণ্য করা হবে না। এটা জেনেই তিনি বদলি হন।
জানতে চাইলে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (বিদ্যালয়) রতন চন্দ্র পন্ডিত বলেন, প্রাথমিক স্কুলে শিক্ষকতা অবদলিযোগ্য চাকরি। তারপরও যারা বদলি হন, অতীতের অভিজ্ঞতা গণ্য হবে না- এমন শর্ত মেনেই তারা বদলি হন। এখানে অভিযোগের কিছু নেই।
অপরদিকে করোনা মহামারির কারণে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বন্ধ হয়ে যাওয়া স্কুল ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান পুনরায় খুলে দেয়ার আহ্বান জানিয়েছে জাতিসংঘের দুই সংস্থা ইউনিসেফ এবং ইউনেস্কো। টিকার জন্য অপেক্ষায় না থেকে অবিলম্বে স্কুল খুলে দেয়ার এই আহ্বান সোমবার এক বিবৃতিতে জানিয়েছে সংস্থা দু’টি।