বহুল প্রত্যাশিত পদ্মা বহুমুখী সেতু আর মাত্র কয়েক ঘন্টা পরই উদ্বোধন হতে যাচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আজ সকাল ১১টায় উপস্থিত থেকে সেতুর উদ্বোধন করবেন। আর যান চলাচলের জন্য সেতু খুলবে আগামীকাল (রোববার)।
পদ্মা সেতুর অর্থনৈতিক গুরুত্ব নানামুখী, এই সেতু চালু হওয়ার সাথে সাথেই মানুষ ও পণ্য পরিবহনে বৈপ্লবিক পরিবর্তনের সূত্রপাত হবে। সেই পথ ধরে বিস্তৃত হবে ব্যবসা-বাণিজ্য, আর এভাবেই দীর্ঘমেয়াদে দক্ষিণাঞ্চলে বিনিয়োগ বাড়বে। পদ্মা সেতু কেবল দক্ষিণাঞ্চলের ১৯টি জেলার সাথে ঢাকার সংযোগকারী একটি সেতুই নয়, এটি উন্নয়নের সুষম বণ্টনের এক আশা জাগানিয়া পথ। পদ্মা সেতু একটি সম্ভাবনার যাত্রা শুরুর চাবি। সেই চাবি দিয়ে খুলবে সম্ভাবনার নতুন দ্বার। আগামীর নতুন অর্থনৈতিক বিজয় এগিয়ে নেবে এই সেতু।
চলুন জেনে আসি সেতু সম্পর্কিত কিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য:
বিশ্বের ১১তম দীর্ঘ সেতু হবে পদ্মা সেতু। পুরো নাম ‘পদ্মা বহুমুখী সেতু’।
সেতুটি নির্মাণের জন্য ৯১৮ হেক্টর জমি অধিগ্রহণ করতে হয়েছে।
এই সেতুর নির্মাণ প্রতিষ্ঠান চায়না মেজর ব্রিজ ইঞ্জিনিয়ারিং কনস্ট্রাকশন কোম্পানি লিমিটেড।
সেতুর নকশা প্রণয়ন করেছে আমেরিকার মাল্টিন্যাশনাল ইঞ্জিনিয়ারিং ফার্ম (অঊঈঙগ)।
সেতুটির দৈর্ঘ্য ৬ দশমিক ১৫ কিলোমিটার বা ২০ লাখ ২ হাজার ফুট, প্রস্থ ১৮ দশমিক ১০ মিটার বা ৫৯.৪ ফুট।
সেতুর নির্মাণকাজ শুরু হয় ২০১৪ সালের ৭ই ডিসেম্বর। সেতুটি রক্ষণাবেক্ষণ করছে বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষ এবং তদারকির দায়িত্ব পালন করছে কোরিয়ান এক্সপ্রেসওয়ে ও বাংলাদেশ সেনাবাহিনী।
সেতুর নিকটতম সেনানিবাস হলো পদ্মা সেনানিবাস।
প্রতিদিন গড়ে ৭৫ হাজার যানবাহন চলাচল করবে এই সেতু দিয়ে।
পদ্মা সেতু ৯ মাত্রার ভূমিকম্প সহনশীল।
সেতুর ভায়াডাক্ট ৩ দশমিক ১৮ কিলোমিটার এবং পিলার ৮১টি। মোট স্প্যান সংখ্যা ৪১। প্রতিটি স্পেনের দৈর্ঘ্য ১৫০ মিটার এবং প্রতিটি স্পেনের ওজন ৩ হাজার ২০০ টন।
সেতুর স্থানাঙ্ক ২৩.৪৪৬০ ডিগ্রি (উত্তর) এবং ৯০.২৬২৩ ডিগ্রি (পূর্ব)।
পানির স্তর থেকে এই অত্যাধুনিক সেতুর উচ্চতা ৬০ ফুট এবং এর পাইলিং গভীরতা ৩৮৩ ফুট।
সেতুর উপরের তলায় চার লেনের সড়ক এবং নিচতলায় থাকবে রেললাইন।
সেতুর সংযোগ সড়ক জাজিরা ও মাওয়া। সংযোগ সড়কের দূরত্ব ১৪ কিলোমিটার।
সেতুর দুই পাড়ে নদী শাসন করা হবে ১২ কিলোমিটার।
মুন্সীগঞ্জ জেলার লৌহজংয়ের সঙ্গে শরীয়তপুর ও মাদারীপুর জেলার সরাসরি সংযোগ স্থাপিত হবে এই সেতু দিয়ে।
দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ২৯টি জেলার সঙ্গে সংযোগ ত্বরান্বিত হবে এই সেতুর মাধ্যম। এর নির্মাণে মোট ব্যয় ধরা হয়েছে ৩০ হাজার ১৯৩ কোটি টাকা।
পদ্মা সেতু তৈরিতে খরচ ও ব্যয়
প্রকল্পের মোট অনুমোদিত ব্যয় ৩০ হাজার ১শ ৯৩ কোটি ৩৯ লাখ টাকা। এখন পর্যন্ত খরচ হয়েছে ২৭ হাজার ৭শ ৩২ কোটি ৮ লাখ টাকা।
মূল সেতু তৈরিতে ব্যয় ধরা হয়েছে ১২ হাজার ১শ' ৩৩ কোটি ৩৯ লাখ টাকা। এর মধ্যে ৪শ কেভি ট্রান্সমিশন লাইন টাওয়ার ও গ্যাস লাইনের ব্যয় বাবদ খরচ হওয়া ১ হাজার কোটি টাকা অন্তর্ভূক্ত রয়েছে। এখন পর্যন্ত মূল সেতু তৈরিতে ব্যয় হয়েছে ১১ হাজার ৯শ' ৩৮ কোটি ৬৩ লাখ টাকা।
নদীশাসনের জন্য বরাদ্দ করা হয় ৯ হাজার চার’শ কোটি টাকা। এখন পর্যন্ত নদীশাসনে ব্যয় হয়েছে ৮ হাজার ৭শ ৬ কোটি ৯১ লাখ টাকা।
সেতুর দুই পাড়ের সংযোগ সড়ক, দু'টি টোল প্লাজা, দু'টি থানা ভবন ও তিনটি সার্ভিস এড়িয়া তৈরিতে বরাদ্দ করা হয় ১ হাজার ৯শ' ৭ কোটি ৬৮ লাখ টাকা। এখন পর্যন্ত খরচ হয়েছে ১ হাজার ৮শ ৯৫ কোটি ৫৫ লাখ টাকা।
সেতু প্রকল্পে ক্ষতিগ্রস্তদের পুনর্বাসনের জন্য বরাদ্দ করা হয় ১ হাজার ৫শ ১৫ কোটি টাকা। এখন পর্যন্ত ব্যয় হয়েছে ১ হাজার ১শ ১৬ কোটি ৭৬ লাখ টাকা।
এছাড়া সেতুর দুই পাড়ে ভূমি অধিগ্রহণের জন্য বরাদ্দ করা হয় ২ হাজার ৬শ ৯৮ কোটি ৭৩ লাখ টাকা। ভূমি অধিগ্রহণে ইতোমধ্যেই পুরো টাকা খরচ করা হয়েছে।