ভাসানচরে রোহিঙ্গাদের নতুন আবাসস্থলের প্রতিটি ক্লাস্টার হাউসের সামনে একটি করে ছোট জলাধার। রোহিঙ্গা শিশু-কিশোররা সেই জলাধারে সাঁতার কাটছিল। কিশোর-তরুণদেরও কাউকে কাউকে আবার তাদের জন্য নির্ধারিত মাঠে ফুটবল খেলায় ব্যস্ত থাকতে দেখা গেল। ক্লাস্টার হাউসে বসে অনেকে নিজেদের মধ্যে গল্প-আড্ডায় মশগুল। কক্সবাজার থেকে ভাসানচরে স্থানান্তর হওয়া রোহিঙ্গারা নতুন ঠিকানায় নিজেদের গুছিয়ে নিয়েছেন। অনেকে নিতে শুরু করেছেন ঈদের প্রস্তুতি।
এখন পর্যন্ত ভাসানচরে নেওয়া হয়েছে ১৩৩টি গরু। ঈদের আগের দিন পর্যন্ত এই সংখ্যা দুইশ ছাড়াবে। ভাসানচরে অবস্থানরত রোহিঙ্গাদের ঈদ আনন্দ ঘিরে কোরবানির জন্য এসব গরু প্রস্তুত রাখা হচ্ছে। ভাসানচরের আয়েশা বেগম নামে এক রোহিঙ্গা নারীর বললেন, ঈদ তো আনন্দের উপলক্ষ। শুনেছি সবার ঘরে ঘরে গরুর মাংস দেওয়া হবে। ছেলে-মেয়েদের নিয়ে ভালোভাবে ঈদ কাটবে। গত ঈদের মতো এবারও বাচ্চাদের জন্য খেলাধুলার আয়োজন থাকছে। এত বড় খোলামেলা এলাকা। সবাইকে নিয়ে এখানে ঘুরতেও ভালো লাগে।
ভাসানচরের আশ্রয়ণ-৩ প্রকল্পের পরিচালক কমডোর এম রাশেদ সাত্তার বলেন, কোরবানির জন্য ভাসানচরে দুই শতাধিক গরু থাকবে। প্রতিটি ক্লাস্টারে তা ভাগ করে দেওয়া হবে। প্রত্যেক পরিবার ন্যূনতম যাতে দুই কেজি মাংস পায়, নিশ্চিত করা হবে। ইসলামিক রিলিফ বাংলাদেশসহ ২-৩টি এনজিও এসব গরু সরবরাহ করছে। রাশেদ সাত্তার আরও বলেন, ওয়্যারহাউসের সামনে ঈদের নামাজের জামাত অনুষ্ঠিত হবে। এছাড়া রোহিঙ্গা শিশু-কিশোরদের জন্য খেলাধুলার ব্যবস্থা থাকছে। থাকবে ফিল্ম শো'র আয়োজনও। পরে আবদুল ওয়াদুদ নামের এক রোহিঙ্গার সঙ্গে কথা হয়। তিনি বলেন, কক্সবাজারের ক্যাম্প থেকে ভাসানচর সব দিক থেকে ভালো। বসবাসের সুন্দর ব্যবস্থা। এখন জীবিকা নির্বাহের জন্য হাঁস, মুরগি, ছাগল, সেলাই মেশিনসহ নানা ধরনের সরঞ্জাম দেওয়া হচ্ছে। এখানে নতুন জীবন শুরু করেছি।
ইসলামিক রিলিফ বাংলাদেশের জ্যেষ্ঠ প্রকল্প ব্যবস্থাপক জাফর আলম বলেন, আমরা ঈদ উপলক্ষে রোহিঙ্গাদের জন্য ১৩৫টি গরু দিচ্ছি। প্রতি ৩৫ পরিবারের জন্য একটি গরুর বন্দোবস্ত। এছাড়া ৪ হাজার ৫৮২টি পরিবারের মধ্যে একটি করে লুঙ্গি ও একটি খামি দেওয়া হবে। তিনি জানান, ২ হাজার ৩৪৪ পরিবারকে ১২ ধরনের খাবার সহায়তা দিয়ে আসছে ইসলামিক রিলিফ। আমাদের পক্ষ থেকে এলপিজি সুবিধা পাচ্ছে ১ হাজার ৩৫০ পরিবার। মিয়ানমার থেকে বাস্তুচ্যুত হয়ে আসা কয়েক লাখ রোহিঙ্গা এতদিন অবস্থান করছিলেন কক্সবাজারের বিভিন্ন ক্যাম্পে। তাদের এক লাখকে সাময়িক বসবাসের জন্য নোয়াখালীর হাতিয়ার ভাসানচরে তৈরি করা হয়েছে দৃষ্টিনন্দন স্থাপনা। গত বছরের ডিসেম্বরে রোহিঙ্গাদের প্রথম দলটিকে ভাসানচরে স্থানান্তর করা হয়। কয়েক দফা মিলে এখন পর্যন্ত ১৮ হাজার ৫২১ জন রোহিঙ্গা ভাসানচরের নতুন ঠিকানায় এসেছেন। তার মধ্যে পুরুষ চার হাজার ৪০৯ জন। নারী ৫ হাজার ৩১৯ জন। শিশু ৮ হাজার ৭৯০। ভাসানচরে এ পর্যন্ত জন্ম নিয়েছে ২৪৪ রোহিঙ্গা শিশু।