ইনজুরি এবং জাতীয় দলে তিন ফরম্যাটেই ম্যাচের সংখ্যা অতিমাত্রায় বৃদ্ধির কারণ দেখিয়ে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে অবসর নিলেন নিউজিল্যান্ড ক্রিকেট দলের অলরাউন্ডার কলিন ডি গ্র্যান্ডহোম। কিউই ক্রিকেটারের একটি বিবৃতি প্রকাশ করেছে নিউজিল্যান্ড ক্রিকেট।
বিবৃতিতে গ্র্যান্ডহোম বলেন, ‘আমার বয়স কমছে না তা আমি স্বীকার করি। বিশেষ করে ইনজুরির কারণে অনুশীলন করাটা কঠিন হয়ে যাচ্ছে। আমার একটি পরিবার আছে। ক্রিকেট পরবর্তী জীবনে আমার ভবিষ্যৎ কি কী তা বোঝার চেষ্টা করছি। গত কয়েক সপ্তাহ ধরে আমার মনে এসব চিন্তাই আসছে।’
‘আমি যথেষ্ট ভাগ্যবান। ২০১২ সালে অভিষেকের পর থেকে ব্ল্যাক ক্যাপসের হয়ে খেলার সুযোগ পেয়েছি। আমার আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ার নিয়ে আমি গর্বিত। তবে আমি মনে করি, এটাই ক্যারিয়ার শেষ করার সঠিক সময়।’
‘আমি গত এক দশক ধরে এই দলের অংশ হতে পেরে নিজেকে ধন্য মনে করেছি। আমরা একসঙ্গে যে অভিজ্ঞতাগুলো ভাগাভাগি করেছি, তার জন্য কৃতজ্ঞ। আমি সতীর্থ, কোচিং স্টাফ এবং প্রতিপক্ষের অনেকের সঙ্গে টেকসই বন্ধুত্ব গড়েছি। আমার বাকি জীবনের জন্য এই স্মৃতিগুলোকে মূল্যবান করে রাখব।’
নিউজিল্যান্ডের হয়ে সব ফরম্যাট মিলিয়ে ১১৫টি আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলেছেন গ্র্যান্ডহোম। নিয়ন্ত্রিত মিডিয়াম পেস বোলিং এবং ব্যাটিংয়ে হার্ড হিটিং করার সক্ষমতার কারণে তিনি দলে প্রায় নিয়মিত সদস্য ছিলেন। ২০২১ সালে ভারতকে হারিয়ে টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের শিরোপা জয়ী দলের সদস্য ছিলেন ৩৬ বর্ষী ক্রিকেটার। ২০১৯ বিশ্বকাপের ঐতিহাসিক ফাইনালে সুপার ওভারে ইংল্যান্ডের কাছে হেরে যাওয়া ম্যাচেও খেলেছিলেন এই কিউই অলরাউন্ডার।
১৯৮৬ সালে জিম্বাবুয়ের হারারেতে জন্মগ্রহণ করেন গ্র্যান্ডহোম। সেখানেই তার প্রথম শ্রেণি ও লিস্ট এ ক্রিকেটে অভিষেক হয়েছিল। ২০০৪ সালে বাংলাদেশে অনুষ্ঠেয় অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপে তিনি জিম্বাবুয়ের প্রতিনিধিত্ব করেছিলেন। পরে তিনি ২০০৬ সালে জিম্বাবুয়ে ছেড়ে যান। ২০১২ সালে নিউজিল্যান্ডের জার্সিতে তিনি টি-টুয়েন্টি ক্রিকেট দিয়ে আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ার শুরু করেন। কাকতালীয়ভাবে সেই জিম্বাবুয়ের বিপক্ষেই তার অভিষেক হয়।
২৯ টেস্টে ২ সেঞ্চুরি ও ৮ হাফ সেঞ্চুরিসহ ৩৮.৭০ গড়ে তার সংগ্রহ ১,৪৩২ রান। বল হাতে নিয়েছেন ৪৯ উইকেট। ২০১৬ সালে পাকিস্তানের বিপক্ষে অভিষেক টেস্টে ৪১ রান দিয়ে নিয়েছিলেন ৬ উইকেট। সাদা পোশাকের ক্রিকেটে এটিই তার সেরা বোলিং ফিগার হয়ে রইল।
এছাড়া ৪৫ ওয়ানডেতে ৪ ফিফটিসহ ১০৫.১৫ স্ট্রাইক রেটে করেছিলেন ৭৪২ রান। বোলার হিসেবে ঝুলিতে পুরেছিলেন ৩০ উইকেট।
ডি গ্র্যান্ডহোমের আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে অবসরের বিষয়ে হতাশা প্রকাশ করেছেন নিউজিল্যান্ডের প্রধান কোচ গ্যারি স্টেড। তার ভাষ্য, ‘সে দলের কিছু সেরা অর্জনে অবদান রেখেছে। ব্যাট হাতে তার অসীম শক্তি এবং বোলিংয়ের দক্ষতা তাকে সত্যিকারের ম্যাচ উইনার বাজিয়েছিল। যেকোনো দলের জন্য নিজেকে বড় সম্পদ হিসেবে গড়ে তুলেছিল। কলিন (ডি গ্র্যান্ডহোম) একজন দুর্দান্ত টিম-ম্যান।’
‘আমরা অবশ্যই ড্রেসিংরুমের চারপাশে তাকে মিস করব। তাকে চলে যেতে দেখাটা দুঃখজনক। সে তার ক্যারিয়ারের এমন একটি পর্যায়ে রয়েছে, যেখানে সে অন্যদিকে যেতে চাইছে। আমরা এটিকে সম্মান করি। আমরা তার ভবিষ্যতের জন্য শুভকামনা জানাই। আশা করি, তাকে নিউজিল্যান্ডের ঘরোয়া ক্রিকেটে দেখা যাবে।’
গ্র্যান্ডহোম নিউজিল্যান্ডে ঘরোয়া ক্রিকেটে খেলা চালিয়ে যাওয়ার ইচ্ছার কথা জানিয়েছেন। নর্দাণ ডিস্ট্রিক্টের হয়ে খেলার বিষয়ে আলোচনাও করবেন।